ঢাকার শেয়ারবাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে দুর্বল কোম্পানির দাপট

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে ছিল বন্ধ ও দুর্বল কোম্পানির দাপট। গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা ১০ কোম্পানির মধ্যে ৬টিই ছিল দুর্বল মানের জেড শ্রেণিভুক্ত। এর মধ্যে ছিল বন্ধ কোম্পানিও।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রধান এই শেয়ারবাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল যথাক্রমে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, সেন্ট্রাল ফার্মা, মুন্নু সিরামিক, অলটেক্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, ইয়াকিন পলিমার, নিউলাইন ক্লথিংস, ঢাকা ডায়িং ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এসব কোম্পানির মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং, সেন্ট্রাল ফার্মা, অলটেক্স, ইয়াকিন পলিমার, নিউলাইন ও ঢাকা ডায়িং দুর্বল মানের জেড শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। এসব কোম্পানি কয়েক বছর ধরে শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এ কারণে এসব কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এরপরও কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে লাফিয়ে বেড়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৩ টাকা ৮০ পয়সা বা সাড়ে ২৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ১০ পয়সায়। মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় অবস্থানে থাকা জেড শ্রেণিভুক্ত অপর কোম্পানি সেন্ট্রাল ফার্মার প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ১৭ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকায়। মূল্যবৃদ্ধির পঞ্চম অবস্থানে থাকা অলটেক্সের প্রতিটি শেয়ারের দাম গত সপ্তাহে ১ টাকা ৭০ পয়সা বা প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা ৯০ পয়সায়। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় সপ্তম অবস্থানে থাকা ইয়াকিন পলিমারের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা বা সাড়ে ১৩ শতাংশের বেশি। অষ্টম অবস্থানে থাকা নিউলাইট ক্লথিংসের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৮০ পয়সা বা সাড়ে ১১ শতাংশ। আর নবম অবস্থানে থাকা জেড শ্রেণির কোম্পানি ঢাকা ডায়িংয়ের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা বা সাড়ে ১১ শতাংশ।

জেড শ্রেণিভুক্ত এই ছয় কোম্পানি ছাড়া গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় থাকা বাকি ৪ কোম্পানির মধ্যে তিনটি ছিল মধ্যম মানের বি শ্রেণির। আর একটি এন শ্রেণিভুক্ত। ফলে দেখা যাচ্ছে, গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় ভালো মৌল ভিত্তির কোনো কোম্পানিই ছিল না।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে আবারও লেনদেন খরা চলছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই এখন বাজারে নিষ্ক্রিয়। ফলে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এমন অবস্থায় ভালো কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ভালো কোম্পানির শেয়ারে বড় ধরনের বিনিয়োগ ছাড়া খুব বেশি দাম বাড়ে না। তার বিপরীতে অল্প বিনিয়োগে দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দামের বড় ধরনের উত্থান ঘটে। এ কারণে কারসাজিকারীরা দাম বাড়ানোর জন্য সব সময় দুর্বল কোম্পানিগুলোকে বেছে নেন।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে যখন বিনিয়োগকারীদের অনাস্থা ও তারল্যসংকট থাকে, তখন স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর দাম বাড়ে। এটি আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। মন্দা বাজারের সুযোগ নিয়ে কারসাজিকারীরা এ ধরনের শেয়ারের দাম বাড়ান। তবে এই ধরনের আচরণের একটি ইতিবাচক দিকও আছে। সেটি হলো খারাপ কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির এক পর্যায়ে গিয়ে ভালো শেয়ারের প্রতি আকৃষ্ট হন বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহে আমরা কিছু খারাপ কোম্পানির শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা দেখেছি। আশা করছি শিগগিরই  সেই ধারা থেকে বেরিয়ে ভালো শেয়ারে ঝুঁকবেন বিনিয়োগকারীরা।’