শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাব বাজারমূল্যে না ক্রয়মূল্যে, মতামত চেয়ে চিঠি

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার পদ্ধতির ব্যাপারে জানতে চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের চলতি বাজারমূল্য, নাকি ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করা হবে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে একযুগ ধরে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর থেকেই এ বিতর্ক শুরু হয়। বর্তমানে বাজারমূল্যের ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাব করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এটাই চায়। তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টরা বরাবরই ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে এ বিনিয়োগসীমা হিসাবের পক্ষে।

আমি মনে করি, বিষয়টি বাজারমূল্যে থাকাটাই সংগত। বেশির ভাগ ব্যাংকের এখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ব্যাংকগুলো কি তা করছে?
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

নতুন করে বাজারে মন্দাভাব দেখা দেওয়ায় আবারও সামনে এসেছে বিষয়টি। নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নিয়ে এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়েছেন। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার চতুর্থ কার্যদিবসেই এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর কাছে পাঠানো চিঠিতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা গণনার পদ্ধতি নিয়ে বিভাগটির মতামত জানতে চাওয়া হয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করতে হলে আইন সংশোধনের দরকার পড়তে পারে। তবে বিভাগটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন ইঙ্গিত পেয়েছে যে আইন পরিবর্তন না করে স্পষ্টীকরণের মাধ্যমেও এটি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া যাবে। কারণ, বাজার থেকে বাজারমূল্যেই ব্যাংকগুলো শেয়ার কিনে থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা–সম্পর্কিত ধারার ব্যাখ্যা ও মতামত জানতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা গণনা হয় বলে ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে না। কারণ, বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগসীমা গণনা হলে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলেই তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় ব্যাংকগুলো। তবে কেনার পর শেয়ারের দাম কমে গেলে হিসাব করা হয় ক্রয়মূল্যে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি ব্যাংকগুলোর দিক থেকে পুঁজিবাজারে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির পথে অন্যতম বাধা। তবে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করলে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলেও তা বিক্রি করতে বাধ্য হতে হবে না ব্যাংকগুলোকে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বিএসইসির কাছে বিনিয়োগসীমা ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করার অনুরোধ আছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন সমন্বয় সভার একাধিক বৈঠকে বিএসইসি বিষয়টি উত্থাপন করেছে। আমরা মনে করি, ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা সহজ হবে।’

পুরো বিষয়টিকে উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন একটি ব্যাংকের বিনিয়োগের সীমা এক কোটি টাকা। ওই ব্যাংক ৯০ লাখ টাকার শেয়ার কেনার পর দাম বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা হয়ে গেলে ব্যাংকটিকে তখন ১০ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়। কিন্তু ৯০ লাখ টাকার শেয়ারের দাম কমে ৭০ লাখ টাকা হয়ে গেলে তখন ৩০ লাখ টাকার শেয়ার কেনার সুযোগ পায় না ব্যাংকগুলো। কেনা যায় ১০ লাখ টাকার শেয়ার। কারণ, তখন ৯০ লাখ টাকার বিনিয়োগকে হিসাবে ধরা হয়।

তবে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যতটুকু জানি, বিএসইসি এটি চাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, বিষয়টি বাজারমূল্যে থাকাটাই সংগত। বেশির ভাগ ব্যাংকের এখনো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ আছে। ব্যাংকগুলো কি তা করছে?’

ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আরও বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ক্রয়মূল্যে গণনা করার পক্ষে মতামত এলে তা বিএসইসির জন্য সাময়িক স্বস্তিদায়ক হবে। তখন প্রচার প্রোপাগান্ডা হবে এবং আবারও বেশি দামে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মুখে থাকার শঙ্কা রয়েছে।