ভিসা নীতি নিয়ে ‘দুশ্চিন্তা’য় বড় দরপতন শেয়ারবাজারে

ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানির বাইরে এদিন ১৬০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের হাতবদল হয়। তার মধ্যে ৯২ শতাংশেরই দাম কমেছে।

শেয়ারবাজার

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানি বাদে হাতবদল হওয়া ৯২ শতাংশ শেয়ারেরই দাম কমেছে। একই সঙ্গে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। পাশাপাশি আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে ২৩৫ কোটি টাকা বা ৩২ শতাংশ।

ডিএসইতে এদিন লেনদেন কমে নেমে এসেছে ৫০০ কোটি টাকায়। গত বৃহস্পতিবার এই শেয়ারবাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭৩৫ কোটি টাকা।

বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকরের ঘোষণার খবরে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারসাজির কারণে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছিল, সেগুলোর দামই আজ সবচেয়ে বেশি কমেছে। যেমন ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, ফু-ওয়াং ফুড ইত্যাদি। এসব কোম্পানির কোনো কোনোটির শেয়ারের দাম গত এক মাসে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের লেনদেন কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল বিমা খাতে। আজ এসব খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হওয়ায় লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

আরও পড়ুন

ঢাকার বাজারে আজ ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫০টির দাম নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল। এর বাইরে হাতবদল হওয়া ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৮টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১২টির দাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকরের খবরটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে একধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। ফলে অনেকে এদিন নিজের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে সাইড লাইনে চলে গেছেন। বিক্রেতার তুলনায় বাজারে ক্রেতা ছিলেন কম। এতে লেনদেনও কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি শেয়ারবাজারে মাঝেমধ্যেই নানা ধরনের খবরে তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। যদিও এসব খবরের সঙ্গে সরাসরি শেয়ারবাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এ ধরনের প্রভাব খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। বাজার তার নিজের নিয়মে ঘুরে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ কমে মোট লেনদেনের ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। গত সপ্তাহে এ খাতের সম্মিলিত লেনদেন মোট লেনদেনের প্রায় ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। গত সপ্তাহের লেনদেনের বড় অংশই ছিল এ খাতনির্ভর। সেই লেনদেন কমে যাওয়ায় সার্বিক লেনদেনও কমে গেছে।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া বিমা খাতের ৫৫ কোম্পানির মধ্যে ৪৬টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪টির দাম। বিমা খাতের দুটি কোম্পানির এদিন লেনদেন হয়নি। বিমা খাতের যে ৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, সব কটিই মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকায় ছিল। এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ইউনিয়ন ইনস্যুরেন্স। আজ লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দিনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যায়। এক দিনেই ১০ শতাংশ বা প্রায় ৭ টাকা দাম বেড়ে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়ায় ৭৫ টাকা ২০ পয়সায়। তাতেই এটি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসে দিনের শুরুতেই।