ধাক্কা কাটিয়ে রেকর্ড বিক্রি বাটা জুতার

করোনার কারণে গত দুই বছর কোম্পানিটি লোকসান করেছে। সেই লোকসান কাটিয়ে এ বছরের প্রথমার্ধে ভালো ব্যবসা করেছে বাটা শু।

করোনার কারণে ২০২০–২১ সালে অস্বাভাবিকভাবে কমে গিয়েছিল বাটা শুর জুতা বিক্রি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানিটির বিক্রি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। জমে গিয়েছিল বিপুল পরিমাণ অবিক্রীত জুতা। বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি গত বছর লোকসানে চলে গিয়েছিল।

সেই ধাক্কা কাটিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেশ ভালোভাবে ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২৮ বছরের পুরোনো বহুজাতিক এ কোম্পানি। ব্যবসায় যে শুধু ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা নয়, দুর্দান্তভাবে ব্যবসায় ফিরেছে কোম্পানিটি। তাতে গত এক যুগের মধ্যে ছয় মাসের বিক্রিতে রেকর্ড করেছে। এ প্রথম বছরের প্রথম ছয় মাসে সোয়া পাঁচ শ কোটি টাকার জুতা ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। ২০০৯–২০১০ সালেও কোম্পানিটির বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি টাকার আশপাশে। সেখানে এ বছর ছয় মাসে ৫০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে। ছয় মাসের বিক্রির হিসাবে এক যুগের মধ্যে করলেও মুনাফা সে অনুযায়ী বাড়েনি। তবে রেকর্ড বিক্রির কারণে লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরেছে কোম্পানিটি। চলতি বছরের প্রথমার্ধে রেকর্ড বিক্রির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ঈদুল ফিতর।

কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাটা শু। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী, দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিজেদের ওয়েবসাইটে অর্ধবার্ষিক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি ৫২৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। যার বড় অংশই বিক্রি হয়েছে গত ঈদুল ফিতরে। গত মে মাসের শুরুতে ঈদুল ফিতর পালিত হয়। কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে কোম্পানিটির যে পরিমাণ জুতা বিক্রি হয়েছে, তার প্রায় ৪০ শতাংশই বিক্রি হয়েছে এক ঈদেই। সাম্প্রতিক সময়ে এক ঈদে এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়নি কোম্পানিটির জুতা। করোনার দুই বছরের (২০২০ ও ২০২১) হিসাব বাদ দিয়ে অন্য স্বাভাবিক বছরগুলোতে ঈদুল ফিতরে বাটার যে পরিমাণ জুতা বিক্রি হয়েছিল, এ বছরের ঈদুল ফিতরে বিক্রি তার চেয়ে ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

কোম্পানিটি বলছে, তিন কারণে রেকর্ড বিক্রির পরও মুনাফায় রেকর্ড হয়নি। কারণগুলো হলো বিশ্ববাজারে কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দেশে ডলারের উচ্চ মূল্য ও লাগাম ছাড়া পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া। তা না হলেও আয়ের মতো মুনাফা আরও বাড়ত।

জানতে চাইলে বাটা শুর বিপণন বিভাগের প্রধান নূসরাত হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে এবার আমরা ৬০০–এর বেশি নতুন ডিজাইনের জুতা বাজারে এনেছি। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এসব জুতার ডিজাইন করা হয়। তাতেই রোজার ঈদে ভালো বিক্রি হয়েছে। যার সুফল মিলেছে আয়ে।’

প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানিটি কর–পরবর্তী মুনাফা করেছে ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। গত বছর একই সময়ে কোম্পানিটি ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা লোকসান করেছিল। লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফেরায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত রোববার এক দিনেই ৬৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৯৮৮ টাকায়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বাটা শু ৫০৮ কোটি টাকার জুতা বিক্রি করেছে। আর জুতার বাইরে অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেছে ২০ কোটি টাকার। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে বাটা ৩৮৮ কোটি টাকার জুতা বিক্রি করেছিল। আর জুতার বাইরে অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করেছিল ১৩ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাটার জুতা বিক্রি বেড়েছে ২৪ শতাংশ বা ১২০ কোটি টাকার। আর জুতার বাইরে অন্যান্য সামগ্রীর বিক্রি বেড়েছে ৭ কোটি টাকার বা ৩৫ শতাংশ। বাটার বিক্রি বলতে গেলে পুরোটাই হয়েছে স্থানীয় বাজারে। রপ্তানি ছিল মাত্র ১১ লাখ টাকার।

কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬২ সালে বাটা শু বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। ১৮৯৪ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ায় কোম্পানিটির যাত্রা শুরু হয়। দেশের শেয়ারবাজারে এটি তালিকাভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। টঙ্গী ও ধামরাইয়ে কোম্পানিটির দুটি কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশে বছরে তিন কোটি জোড়া জুতা বিক্রি করে বাটা।