চেক জমা দিয়েই মিলবে শেয়ার কেনার সুযোগ

কোনো বিনিয়োগকারীর চেক প্রত্যাখ্যাত হলে তার প্রাথমিক দায় নিতে হবে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ব্রোকারেজ হাউসে চেক জমা দিয়েই শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট জমা দিয়ে দিনে দিনেই শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। নতুন এ নির্দেশনার ফলে কয়েক দিন ধরে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দেওয়া উৎকণ্ঠার অবসান হলো।

গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে সব কটি ব্রোকারেজ হাউসে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। সেখানে চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনার সুবিধা বাতিল করা হয়। এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় শেয়ারবাজারে।

বিনিয়োগকারীসহ ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা বাতিলের জন্য বিএসইসির ওপর চাপ তৈরি করা হয়। একদিকে শেয়ারবাজারের পতন, অন্যদিকে বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউসের চাপ দুইয়ে মিলে শেষ পর্যন্ত চেক জমা দিয়ে শেয়ার কেনার আগের সুবিধাটি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তবে এ জন্য নতুন করে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউসগুলোকেই এসব শর্ত পরিপালন করতে হবে।

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন চলাকালীন চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট জমা দিয়ে ওই দিনই শেয়ার কেনার সুযোগ পাবেন। সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে ওই দিনই বিনিয়োগকারীর দেওয়া চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট ব্যাংকে জমা দিতে হবে। যদি কোনো কারণে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের লেনদেন সময়ের পর কেউ চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট জমা দেন, তাহলে পরবর্তী কার্যদিবসে তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংককে।

যদি কোনো বিনিয়োগকারীর চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট প্রত্যাখ্যাত হয়, সে ক্ষেত্রে যে পরিমাণ অর্থের ঘাটতি হবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংককে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে জমা দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগকারীর চেক প্রত্যাখ্যাত হলে তার প্রাথমিক দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের ওপর। এ দুটি শর্ত পরিপালনে কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইপিও, পুনঃ আইপিও কোটা সুবিধা হারাবে।

চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংককে যেমন দায়বদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীর জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

যে বিনিয়োগকারীর চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফট প্রত্যাখ্যাত হবে, ওই বিনিয়োগকারী পরবর্তী এক বছর চেক, পে-অর্ডার বা ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন না। প্রতি মাসে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার তথ্য সংগ্রহ করবে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে।

সেখানে যেসব বিনিয়োগকারীর চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুযোগ থাকবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে সব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে বিনিয়োগকারীদের চেক, পে-অর্ডার ও ডিমান্ড ড্রাফট প্রত্যাখ্যাত হওয়াসংক্রান্ত তথ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জমা দিতে হবে। তবে শেয়ার কেনাবেচার অর্থ জমার ক্ষেত্রে চেকের বদলে আরটিজিএস, বিএফটিএনসহ ব্যাংক খাতে প্রচলিত অন্যান্য লেনদেনব্যবস্থা ব্যবহারে বিনিয়োগকারীদের উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।