ডলার–সংকটের মধ্যে ‘ডলারে ঋণ’ করছে বার্জার

ডলার–সংকটে যাতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সে জন্য মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ডলারে ঋণ’ নিচ্ছে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড। কাঁচামাল আমদানিতে প্রয়োজন অনুসারে এ ঋণ ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছে বার্জার পেইন্টস।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক এ কোম্পানি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানির মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান জেঅ্যান্ডএন ইনভেস্টমেন্টস (এশিয়া) থেকে ছয় কোটি ডলার ঋণ করছে তারা। এ জন্য জেঅ্যান্ডএনের সঙ্গে চুক্তি করবে বার্জার। ডলারে নেওয়া এ ঋণ কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়, তাতে বেড়ে যায় আমদানি খরচ। পাশাপাশি দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। ডলার–সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রেও তদারকি জোরদার করা হয়।

সংকটের কারণে প্রতি ডলারের দাম বেড়ে ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে সংকট আরও প্রকট হয়। এ অবস্থায় ডলারের দাম নির্ধারণের ভার গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) মিলে ডলারের মূল্য নির্ধারণের কাজটি করে আসছে।

এদিকে ডলার–সংকটের কারণে এখনো ঋণপত্র খুলতে বেগ পেতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। যেসব আমদানিকারকের রপ্তানি আয় নেই, তাদের ক্ষেত্রে এ সংকট প্রকট। ১১৩ থেকে ১১৫ টাকায় নগদ ডলার কিনে অনেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ঋণপত্র খুলতে হচ্ছে। এমনকি ঋণপত্র খুলতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময়ও লাগছে।

এ অবস্থায় আমদানিনির্ভর দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিকল্প পন্থায় ডলার সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান থেকে মার্কিন ডলারে ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। একাধিক বহুজাতিক কোম্পানি এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বার্জারই প্রথম তাদের মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। বার্জার যে পরিমাণ ‘ডলার ঋণ’ করছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬৩০ কোটি টাকার বেশি (প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৫ টাকা হিসাবে)। কয়েক বছরে এ ঋণ শোধ করবে বার্জার।

ডলারে ঋণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুপালী চৌধুরী আজ সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডলার–সংকটের এ সময়ে আমরা ঋণপত্র খুলতে এখনো বড় ধরনের কোনো সমস্যায় পড়িনি। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেভাগে মাদার কোম্পানি (মূল মালিকানা প্রতিষ্ঠান) থেকে ডলারে ঋণে নেওয়ার ব্যবস্থা করে রাখছি। যাতে আমদানিতে কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়তে না হয়।’

এদিকে আজ বার্জার পেইন্টসের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে পরিকল্পিত এ ঋণের জন্য চুক্তির নীতিমালা বার্জার পেইন্টসের পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। এ ঋণ দেশের আনার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে আবেদনও করেছে কোম্পানিটি।

বিজ্ঞপ্তিতে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী বলেন, ‘বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন ডলার–ঘাটতিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের ঋণ গ্রহণের বিষয়টি অনুমিতই ছিল। ক্রেতাদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে কাঁচামাল ব্যবহারের সুযোগ রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’