বড় দরপতনেও লেনদেন ছিল আশা জাগানিয়া

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ১৯টির দাম বেড়েছে। আর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১২০ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

ফ্লোর প্রাইস উঠে যাচ্ছে এবং অর্থনীতি আরও খারাপ হবে—এমন গুজবে শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১২০ পয়েন্ট কমে আবারও সাড়ে ৬ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে নেমে এসেছে।

বড় এ পতনের ফলে ডিএসইএক্স সূচকটি গত এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৫০ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর ডিএসইএক্স সূচকটি ৬ হাজার ৪৩১ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

আরও পড়ুন

বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর একপর্যায়ে বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হচ্ছে।

তাতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় শেয়ারের দামও দ্রুত কমতে থাকে। সে কারণে বড় ধরনের দরপতন ঘটে। তবে বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে বিএসইসিতে কোনো আলোচনাও হয়নি।

বাজারসংশ্লিষ্ট আরেকটি পক্ষ জানিয়েছে, সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, আগামী বছর বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হলে তার ধাক্কা লাগবে দেশের অর্থনীতিতেও। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য আসায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ভর করেছে।

এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার খবরও বেরিয়েছে। আবার সেপ্টেম্বরে কমেছে প্রবাসী ও রপ্তানি আয়। এসব খবরে গতকাল সপ্তাহের প্রথম লেনদেন দিবসে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

আরও পড়ুন

তবে সূচকের বড় ধরনের পতন হলেও লেনদেনের গতি ছিল বেশ ভালো। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে একটি গোষ্ঠী কম দামে শেয়ার কেনার সুযোগ নিয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ সময়ে এসে বড় ধরনের দরপতনের মতো যৌক্তিক কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি পক্ষ আতঙ্ক ছড়িয়ে বাজারে পতন ঘটিয়ে কম দামে শেয়ার কেনার চেষ্টা করছে।

জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে একটি পক্ষ রয়েছে, যারা তাদের প্রয়োজনে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দাম বাড়ায়। আবার তারাই কখনো কখনো গুজব ছড়িয়ে দাম কমায় কম দামে শেয়ার কেনার জন্য। তবে এ কথা ঠিক বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েছে। এসব অনিশ্চয়তাকে পুঁজি করে হয়তো কেউ কেউ সুযোগ নেন।’

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ১৯টি বা ৫ শতাংশের দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ১৬৭টির বা ৪৫ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮২টি বা প্রায় ৫০ শতাংশের।