আন্তর্জাতিক হিসাব মান মানলে ব্যাংকের সম্পদ ৪০% কমে যাবে
দেশে কোনো ব্যাংক আর্থিক বিবরণী তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হিসাব মান বা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) মানে না। এ কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত চিত্র আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে আসে না। আইএফআরএস অনুসরণ করা হলে ব্যাংকগুলোর ৪০ শতাংশ সম্পদ কমে যাবে।
শেয়ারবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) পক্ষ থেকে আজ সোমবার আয়োজিত ‘সিএমজেএফ টকে’ এ কথা বলেন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, আইএফআরএস বাস্তবায়ন করা হোক, তাহলে ব্যাংকের প্রকৃত আর্থিক তথ্য আর্থিক বিবরণীতে উঠে আসবে।’
রাজধানীর পল্টনে সিএমজেএফের নিজস্ব কার্যালয়ে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। সিএমজেএফের সাধারণ সম্পাদক আবু আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জিয়াউর রহমান।
সিএমজেএফ টকে এফআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বছরের পর বছর টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই টাকা কি কখনো পাওয়া যাবে? যদি আদায় হয়, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে আমরা দেখি, খেলাপি ঋণ সহজে আদায় করা যায় না। বরং ২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে এসব ঋণকে নিয়মিত ঋণে রূপান্তর করা হয়। অথচ এই ২ শতাংশ দিয়ে তো সুদ আয়ও আসে না। সুদ আরও বেশি। ফলে যেটি হচ্ছে, তা হলো সুদও মিলছে না, আসলও পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু নিয়মিত ঋণ পুনঃ তফসিল করা হচ্ছে। এটি করা হচ্ছে, যাতে খেলাপিরা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন।’
হামিদ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আর্থিক হিসাব বিবরণীকে ব্যবহার করে পুঁজিবাজারে অনেক কারসাজি করা হয়। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে অনেক দুর্বল কোম্পানি চলে আসে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, আইপিওতে আসার আগে তিন বছর টানা মুনাফা বাড়ছে। কিন্তু আইপিওতে আসার পর মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমে।
পুঁজিবাজারে কারসাজি হলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। অনেক সময় কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে, অথচ তাদের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। আবার অনেক সময় মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন থাকে। তাই কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের সত্যতা যাচাই করা খুব জরুরি।
অনুষ্ঠানে এফআরসি চেয়ারম্যান জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষকদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে। এর পর থেকে এফআরসিতে অনিবন্ধিত কোনো নিরীক্ষক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির নিরীক্ষা করতে পারবে না।
এফআরসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, কোনো কোম্পানির রাজস্ব ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলে, সেই কোম্পানি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানি হিসেবে বিবেচিত হবে। দেশে এ ধরনের প্রায় ৩ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে আড়াই হাজার ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠান আছে। এগুলোও এফআরসির আওতায় আসবে।