শেয়ারবাজারে লেনদেনে ফিরছে আলোচিত পিপলস লিজিং

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারের লেনদেনে ফিরে আসছে ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। প্রায় পাঁচ বছর পর আগামী ১০ মার্চ রোববার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আবার কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরু হবে।

ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী, কোম্পানিটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত হয়ে লেনদেন শুরু করবে।

আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য দেশজুড়ে বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের কারণে কোম্পানিটি একসময় প্রায় দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। তখন গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না প্রতিষ্ঠানটি।

তাতে একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানিটি বিলুপ্ত বা অবসায়নের উদ্যোগ নেয়। এ কারণে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ করা হয়। এখন আবার কোম্পানিটিকে লেনদেনে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, পিপলস লিজিংকে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে এ অবসায়নের উদ্যোগের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ একটি পক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। আদালত অবসায়নের উদ্যোগ বাতিল করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভালোভাবে আবার কার্যক্রম শুরু করতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) প্রয়োজনীয় সহায়তার আদেশ দেন। আদালতের ওই আদেশের ভিত্তিতি বিএসইসির সম্মতিক্রমে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন আবার চালুর উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, একসময় কোম্পানিটি অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় শেয়ারবাজারে এটির লেনদেন বন্ধ করা হয়েছিল। পরে আদালত কোম্পানিটির পর্ষদ পুর্নগঠনের মাধ্যমে এটির স্বাভাবিক কার্যক্রম চালুর আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির লেনদেন পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসইর পর্ষদ।

পিপলস লিজিং শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৫ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ৩ টাকা। ২০১৪ সালের পর এটি বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি।

আদালত ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেন। সে অনুযায়ী নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেওয়ার পর সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এরই মধ্যে কিছু আমানতকারীর টাকাও ফেরত দিতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে পুনর্গঠিত পিপলস লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সগীর হোসেন খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৩ সালে পর্ষদ পুনর্গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা আমানতকারীদের ৪৫ কোটি টাকার পাওনা ফেরত দিয়েছি। কিছু কিছু ঋণের অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যখনই কিছু ঋণ ফেরত আসছে, তখনই আমানতকারীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

সগীর হোসেন খান আরও বলেন, আদালতের নির্দেশে পিপলস লিজিংয়ের কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।