পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন ঢাকার বাজারে

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারের টানা দরপতন যেন থামছেই না। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে গতকাল রোববার দরপতনের পাশাপাশি লেনদেনও আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। তাতে শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। টানা পতনে এখন লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন আরও ৬২ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ কমেছে। তাতে সূচকটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ২৫১ পয়েন্টে। এ নিয়ে একটানা ৯ দিন সূচক কমেছে বাজারে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ১৭০ পয়েন্ট বা প্রায় সোয়া ১ শতাংশ কমেছে। দুই বাজারে এদিন লেনদেন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৩ কোটি টাকায়, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১৮৫ কোটি টাকা বা প্রায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ কম। শুধু তা–ই নয়, গত প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৯২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৬১ কোটি টাকা কম।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চলছে। এ কারণে বাজার অনেকটাই প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। বাজারে নতুন বিনিয়োগ তো হচ্ছেই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের অনেকে বাজার ছাড়ছেন। এ অবস্থায় বাজার নিয়ে চরম আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। সেই সঙ্গে চলছে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণ সমন্বয়ে জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেল।

নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনার বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে ঋণসুবিধা দেয় ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক। যখন বাজারে টানা পতন শুরু হয়, তখন শেয়ারের দাম নির্দিষ্ট একটি সীমার নিচে নেমে গেলে ঋণ সমন্বয়ে ঋণগ্রহীতার শেয়ার বিক্রি করে দেয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। শেয়ারবাজারে এটিই জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেল হিসেবে পরিচিত।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আরও বলছেন, দরপতন ঠেকাতে শেয়ারের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি না কমতে পারার সীমা আরোপের পর বাজারে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৫ এপ্রিল এ সীমা আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এখন এসে এ সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ, যখনই বাজারে দরপতন শুরু হয়, তখনই দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ শেয়ার ৩ শতাংশ কম দামে বিক্রির প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। তাতে ক্রেতাও মিলছে না।

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের প্রথম এক ঘণ্টাতেই সূচকটি ৮৩ পয়েন্ট কমে যায়। যদিও শেষ ঘণ্টায় গিয়ে তা কিছুটা পুনরুদ্ধার হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সূচকের পতনের পেছনে যথারীতি বড় ভূমিকা ছিল ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দরপতন। কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, রেনেটা, বেক্সিমকো ফার্মা, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, বীকন ফার্মা। এ ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার কারণে এদিন ডিএসইএক্স সূচকটি কমেছে ২১ পয়েন্ট।

ডিএসইতে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৮২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৪ শতাংশ বা ৩২২টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে ৩১টির বা ৮ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টির বা প্রায় ৮ শতাংশের দাম।