তদন্ত কমিটি গঠনের গুজবে কমল শেয়ারের দাম

শেয়ারবাজার
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারদর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু কোম্পানির বিরুদ্ধে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তদন্ত কমিটি গঠন করবে, এমন খবরে গতকাল বুধবার শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটেছে। যদিও দিন শেষে তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বৈঠক ছিল। সেটাকে ঘিরেই বাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এক মাসে দু-তিন গুণ বা আরও বেশি বেড়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করতে যাচ্ছে বিএসইসি। এই সুযোগে বড় বিনিয়োগকারীরা কিছু কোম্পানির শেয়ার ছেড়ে দিয়ে মুনাফা তুলে নেন। এতে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় দরপতন ঘটে। ফলে সূচক কমে যায়। তবে বিএসইসির ওই বৈঠকে তদন্ত কমিটি গঠনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজার কয়েকটি কোম্পানিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনেই মূল্যসূচকের উত্থান-পতন ঘটছে। শেয়ার কেনাবেচার বড় অংশ কয়েকটি কোম্পানির দখলে চলে যাওয়ায় তাদের লেনদেন কমলে বা বাড়লে এর প্রভাব গিয়ে পড়ে বাজারের সার্বিক লেনদেনে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, কয়েকটি শেয়ারের দাম গত এক মাসে বেড়ে দ্বিগুণ–তিন গুণ হয়ে গেছে। এসব শেয়ারে অনেকের বড় অঙ্কের মুনাফাও রয়েছে। গতকাল লেনদেন চলাকালে হঠাৎ বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে, কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তখন বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেন।

ঢাকার বাজারে কয়েক দিন ধরে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে দাপুটে অবস্থানে রয়েছে বেক্সিমকো ও ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের দাম এক মাসে ৪৩০ টাকা বা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ৬০৪ টাকায়। আর ওরিয়ন ফার্মার শেয়ারের দাম এক মাসে বেড়েছে সাড়ে ৪৯ টাকা। এ ছাড়া সি পার্ল বিচ রিসোর্টের (রয়েল টিউলিপ) শেয়ারের দাম এক মাসে দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। এসব কোম্পানির এমন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নানা ধরনের সমালোচনা চলছে। তাই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে বিএসইসির তদন্তে নামার গুজবে লেনদেনের গতি শ্লথ হয়ে যায়।

ডিএসইতে গত মঙ্গলবার ওরিয়ন ফার্মার রেকর্ড ৩২৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল, যা গতকাল কমে ২৩০ কোটি টাকায় নামে। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে কোম্পানিটির লেনদেন ১০০ কোটি টাকা কমেছে। একইভাবে কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের লেনদেনের পরিমাণও। আগের দিনের চেয়ে কোম্পানিটির লেনদেন প্রায় ৮৫ কোটি টাকা কমেছে।

এ দুই কোম্পানির লেনদেন কমার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক বাজারেও। ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা কম। ঢাকার বাজারে গতকাল শেয়ার লেনদেন হওয়া ৩৭১টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ১৫৯টির, বেড়েছে ৫৮টির আর অপরিবর্তিত থাকে ১৫৪টির।