এ বছর কর মেলা হচ্ছে না

  • প্রতি বছর যত করদাতা রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কর মেলায় জমা পড়ে।

  • গতবার কর মেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দেন।

  • ২০১০ সালে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রথম কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

গত বছর মেলার শেষ দিন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

কর মেলার জন্য সাধারণ করদাতার অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ, কর মেলায় গিয়ে ঝক্কিঝামেলা ছাড়াই অনেকটা নির্বিঘ্নে বার্ষিক আয়কর জমার পাশাপাশি কর পরিশোধ করতে পারেন। গত ১০ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত কর মেলা করদাতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেছে।

এবার এমন করদাতাদের জন্য দু:সংবাদ। এ বছর কর মেলা হচ্ছে না। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। তবে মাঠ পর্যায়ের প্রতিটি কর অঞ্চলে আয়কর রিটার্ন নেওয়া হবে। সেখানে করদাতাদের রিটার্ন জমা সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দেওয়ার জন্য সেবা কেন্দ্র চালু করা হবে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

করোনার কারণে এবার কর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোতে করদাতার মেলার মতো যাবে সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে
আরিফা শাহানা, এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন)

২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এ দেশে কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর প্রতি বছরই মেলার পরিসর বেড়েছে। গতবার রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরে সপ্তাহব্যাপী কর মেলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলা ও এক শ’র বেশি উপজেলায় এ মেলা হয়। কর মেলায় করদাতারা কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ, রিটার্ন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক বুথসহ নানা ধরনের সেবা পান।

একই ছাদের নিচে সব সেবা পাওয়ায় গত দশ বছরে করদাতাদের কাছে কর মেলা জনপ্রিয় হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন কর মেলায় করদাতাদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। কর কার্যালয়ে গিয়ে হয়রানি এড়াতে অনেক করদাতা কর মেলার জন্য অপেক্ষা করেন। এবার তাঁদের সেই আশায় গুঁড়েবালি। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া যাবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য (কর প্রশাসন) আরিফা শাহানা প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে এবার কর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে না। তবে মাঠপর্যায়ের কর অফিসগুলোতে করদাতার মেলার মতো যাবে সুবিধা পান, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

গত বছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কর মেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গতবার সব মিলিয়ে ২২ লাখের বেশি করদাতা তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে।

এনবিআরের কর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র বাংলাদেশেই কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এক দশক আগে কর মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই করদাতাদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। রাজধানীর কর মেলার সাত দিনে সকাল থেকেই ব্যাপক ভিড় দেখা যায়।

প্রতি বছর যত করদাতা রিটার্ন দাখিল করেন, তাদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কর মেলায় জমা পড়ে। করদাতারা মেলায় কর দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কর মেলায় ৬ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গতবার সব মিলিয়ে ২২ লাখের বেশি করদাতা তাদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি বদলে গেছে। অনেকের আয় কমেছে। কর মেলা না হলে রিটার্ন দেওয়াও কমতে পারে বলে মনে করেন অনেক কর কর্মকর্তা।

প্রতি বছর সেরা করদাতাদের ঘটা করে সম্মাননা দেয় এনবিআর। তাও এবার অনিশ্চিত হয়ে গেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কোভিডের কারণে এবার সেরা করদাতাদের সম্মাননা নাও দেওয়া হতে পারে।