এক মাসেই এল ২৫৯ কেজি সোনা

  • শুধু অক্টোবর মাসে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে এসেছে রেকর্ড ২২ হাজার ২৪০ ভরির সমপরিমাণ স্বর্ণবার।

  • চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৮৯টি বার বা সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণ ঘোষণা দিয়ে এনেছেন যাত্রীরা।

  • ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ফেরার সময় ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম ওজনের সোনার বার নিয়ে আসতে পারেন।

করোনা শুরুর পর থেকে বাজারে স্বর্ণের চাহিদা অনেক কমে গেছে। বিয়ে-শাদিসহ নানা অনুষ্ঠানও আগের মতো হচ্ছে না। স্বর্ণের চাহিদা কমে যাওয়ার পরও ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বর্ণ আনার প্রবণতা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তাই বৈধ পথে আসা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়েই এখন রহস্য তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে গড়ে ৮৯টি বার বা সাড়ে ১০ কেজি স্বর্ণ ঘোষণা দিয়ে এনেছেন যাত্রীরা। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক রুটে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত আকাশপথে কোনো স্বর্ণবার আনার সুযোগ ছিল না। সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত আকারে উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়। এরপর আবার শুরু হয় আকাশপথে বৈধভাবে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ আমদানি।

আরও পড়ুন

শাহ আমানত বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে এই বিমানবন্দর দিয়ে শুল্ককর পরিশোধ করে ৩ কেজি ৭৯৫ গ্রাম স্বর্ণবার এনেছেন যাত্রীরা। অক্টোবর মাসে আনা হয়েছে ২ হাজার ২২৪টি স্বর্ণবার, যা ২২ হাজার ২৪০ ভরি বা ২৫৯ কেজির সমান। এই স্বর্ণবার এনেছেন ১ হাজার ২০০ জন বিদেশফেরত যাত্রী, যাঁদের সিংহভাগই দুবাইফেরত। এসব যাত্রীর অধিকাংশের বাড়িই চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অথচ গত ২০১৯-২০ পুরো অর্থবছরে এ বিমানবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১০৪ কেজি ২৩৫ গ্রামের স্বর্ণবার এনেছিলেন যাত্রীরা।

বৈধ পথে স্বর্ণবার আনার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের পর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালে এই বিমানবন্দর দিয়ে সব মিলিয়ে ১৪০ কেজি স্বর্ণবার ব্যাগেজ রুলের আনা হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচ মাস করোনার কারণে আকাশপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এ সময় বিদেশ থেকে আকাশপথে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন স্বর্ণালংকারের বেচাকেনা তেমন নেই। তবে প্রবাসীদের অনেকে দেশে ফেরত আসার সময় নগদ মুদ্রা না এনে স্বর্ণবার নিয়ে আসছেন। এই স্বর্ণবার যদি দেশে থাকে, তাহলে তা ইতিবাচক। কারণ বৈধভাবে আনা স্বর্ণে সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় একজন যাত্রী বিদেশ থেকে ফেরার সময় ঘোষণা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম ওজনের সোনার বার নিয়ে আসতে পারেন। এতে সর্বোচ্চ দুটি বার আনা যায়। বৈধভাবে সোনার বার আমদানির জন্য প্রতি ভরিতে (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) শুল্ক-কর ২ হাজার টাকা। তবে বিদেশ থেকে ফেরার সময় একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম ওজনের (প্রায় সাড়ে আট ভরি) স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে আনতে পারেন। তবে একই রকমের অলংকার ১২টির বেশি আনা যায় না।

ব্যাগেজ রুলের বাইরে স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানও ব্যাংকের মাধ্যমে স্বর্ণ আমদানি করতে পারেন। গত এক বছরে ২৬ কেজি স্বর্ণ আমদানি করেছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা স্বর্ণের হয়তো সামান্য পরিমাণ স্বর্ণের দোকানে ব্যবহার হতে পারে। তবে এত বেশি ব্যবহারের স্বর্ণ কোথায় যাচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
বাজুসের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী

বৈধ পথে বাড়ার কারণ কী?

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, যাত্রীরা যেমন নিজেদের প্রয়োজনে স্বর্ণবার নিয়ে আসছেন, তেমনি অন্যের হয়েও বার বহন করে আনছেন। এসব স্বর্ণ কোথায় যাচ্ছে, সেটিই এখন বড় রহস্য।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সহকারী কাস্টমস কমিশনার মুনাওয়ার মুরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু অক্টোবরেই ব্যাগেজ রুলের আওতায় যে স্বর্ণবার আমদানি হয়েছে, তা থেকে সরকার সাড়ে চার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে।

আমদানি করা এসব স্বর্ণবার দিয়ে অলংকার তৈরি করতে হলে স্বর্ণের দোকানে নিতে হবে। তবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈধভাবে আনা হলেও এত স্বর্ণবার তাঁরা পাচ্ছেন না।

জানতে চাইলে বাজুসের চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাগেজ রুলের আওতায় আনা স্বর্ণের হয়তো সামান্য পরিমাণ স্বর্ণের দোকানে ব্যবহার হতে পারে। তবে এত বেশি ব্যবহারের স্বর্ণ কোথায় যাচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’