এবার নিজের সেই চিঠি স্থগিত করলেন অর্থমন্ত্রী

লা মেরিডিয়ান হোটেলকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিষেধাজ্ঞার পর এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাঁর দেওয়া এ–সংক্রান্ত চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর পক্ষে তাঁর একান্ত সচিব মো. ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, গত ৮ সেপ্টেম্বর পাঠানো এ–সংক্রান্ত চিঠির বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য অনুরোধ করা হলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে আগের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে আজ নতুন করে চিঠি পাঠানো হয় মন্ত্রীর দপ্তর থেকে।

আরও পড়ুন

গভর্নর ও বিএসইসির চেয়ারম্যানকে লেখা অর্থমন্ত্রীর ৮ সেপ্টেম্বরের চিঠিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে লা মেরিডিয়ান হোটেলের মালিকানায় থাকা প্রতিষ্ঠান বেস্ট হোল্ডিংসকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সরাসরি তালিকাভুক্তি বা ডাইরেক্ট লিস্টিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বেসরকারি খাতের কোম্পানির সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা–সংক্রান্ত নির্দেশনা শিথিলের কথা বলা হয়েছিল।

বিএসইসি নির্দেশনা শিথিলের কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বেসরকারি কোম্পানিকে সরকারি কোম্পানির তকমা দিয়ে কোম্পানিটিকে সরাসরি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেন ডিএসইর প্রভাবশালী এক পরিচালক। যিনি ১৯৯৬ ও ২০০০ সালের দুবারের শেয়ার কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত। তাঁরই প্রভাবে ডিএসইর আজকের পর্ষদ সভার অনুমোদনের জন্য বিষয়টিকে গতকাল বুধবার সরকারি ছুটির দিনে অতিরিক্ত আলোচ্যসূচি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

উদ্দেশ্য ছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেন ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে। আবার ছুটির দিন হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে যাতে খুব বেশি জানাজানি না হয়। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ছুটির দিনে বিএসইসি জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়। কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির বিষয়ে পর্ষদ সভায় কোনো ধরনের আলোচনা না করার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিএসইর কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

লা মেরিডিয়ান হোটেলকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিষেধাজ্ঞার পর এবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও তাঁর দেওয়া এ–সংক্রান্ত চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।

লা মেরিডিয়ান হোটেলে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের। এ চার ব্যাংকের মালিকানার অংশের কারণেই কোম্পানিটিকে সরকারি কোম্পানির তকমা দেওয়া হয়। কারণ, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ছাড়া বেসরকারি খাতের কোম্পানিকে সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে বিএসইসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা আইনি ফাঁকফোকর ব্যবহার করে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা তুলে নিতে চেয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। কারণ, সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে শেয়ার বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যেত, তা সরাসরি উদ্যোক্তাদের পকেটে চলে যেত।

লা মেরিডিয়ানকে শেয়ারবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে রেইস পোর্টফোলিও অ্যান্ড ইস্যু ম্যানেজমেন্ট এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট। ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা এ দুই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও মিউচুয়াল ফান্ড নামে আবার লা মেরিডিয়ানের শেয়ার রয়েছে। শেয়ারবাজারসহ আর্থিক খাতে রেইস এখন আলোচিত একটি নাম।