খেলার মধ্যে নিয়ম বদলানো যেমন অন্যায্য, শেয়ারবাজারেও তেমনি

গত রোববার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানি বার্জার পেইন্টস, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) আরও শেয়ার বাজারে ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। ধাপে ধাপে এক বছরের মধ্যে কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অংশ থেকে এ শেয়ার বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে শেয়ারবাজারে চলছে নানামুখী আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে তাই প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক (বর্তমানে লিয়েনে) ও সিরডাপের পরিচালক (গবেষণা) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। অনুলিখন করেছেন সুজয় মহাজন

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সম্প্রতি বাজারে তিন কোম্পানির আরও শেয়ার ছাড়ার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটিকে অন্যায্য মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক (বর্তমানে লিয়েনে) মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তাঁর মতে, খেলার মাঝখানে খেলার নিয়ম বদলানো যেমন অন্যায্য (আনফেয়ার), শেয়ারবাজারের তিন কোম্পানির বাড়তি শেয়ার বিক্রির নির্দেশনাটিও তেমনি। কারণ, এর মাধ্যমে কারও কারও লাভবান হওয়ার যেমন সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি অনেকে ক্ষতিগ্রস্তও হবেন।

মোহাম্মদ হেলাল মনে করেন, বার্জার, ওয়ালটন ও আইসিবির মতো প্রতিষ্ঠানের ১০ শতাংশ শেয়ার বাজারে থাকাটা বাজারের জন্য অবশ্যই ভালো। কারণ, আমাদের বাজারে ভালো শেয়ারের ঘাটতি রয়েছে, তেমনি চাহিদাও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে বাজারে এসব কোম্পানির লেনদেনযোগ্য শেয়ারের পরিমাণ বেশি থাকলে বাজারের গভীরতা অনেক বাড়বে, তা নিয়ে কোনো ভিন্নমত নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মাঝপথে এসে কোম্পানিগুলোকে এভাবে বাড়তি শেয়ার ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে?

অর্থের জোগান বেড়েছে বলেই বাজারে চাঙাভাব ফিরেছে। যদি অর্থের প্রবাহে টান পড়ে, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারের দামেও পড়বে। তাই যেকোনো নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেটির বাস্তবায়ন ও তার প্রভাব নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, পরিচালক (গবেষণা), সিরডাপ

ওয়ালটন বাজারে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি। মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিটিকে বাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়াটাই ছিল বড় ভুল। যদি কোম্পানিটি শুরুতেই ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ত, তাহলে হয়তো বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে সেটি দরপ্রস্তাবের ধরনটাই বদলে যেত। দরপ্রস্তাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১২ থেকে ৭৬৫ টাকা পর্যন্ত দরপ্রস্তাব করেন। তাতে আইপিওতে এটির প্রতিটি শেয়ারের দাম নির্ধারিত হয় ২৫২ টাকায়। যদি কোম্পানিটি শুরুতে ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়ত, তাহলে আইপিওতে হয়তো এটির শেয়ারের দাম এত বেশি হতো না।

বাজারে ওয়ালটন ও বার্জারের লেনদেনযোগ্য শেয়ার কম বলেই এসব শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি আগ্রহী। তাতে বাজারে এসব শেয়ারের দামও অনেক। এখন এসে বাড়তি শেয়ার ছাড়লে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, পরিচালক (গবেষণা), সিরডাপ

মোহাম্মদ হেলাল আরও বলেন, বাজারে ওয়ালটন ও বার্জারের লেনদেনযোগ্য শেয়ার কম বলেই এসব শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি আগ্রহী। তাতে বাজারে এসব শেয়ারের দামও অনেক। এখন এসে বাড়তি শেয়ার ছাড়লে শেয়ারের দাম কমে যেতে পারে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আবার তিন কোম্পানিকে যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের অংশ থেকে বাড়তি শেয়ার ছাড়তে হবে বাজারে। সেটি হলে শেয়ার বিক্রির ওই টাকা যাবে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের পকেটে। কোম্পানি তাতে লাভবান হবে না।

এ ছাড়া বিএসইসির এ নির্দেশনার ফলে শেয়ারবাজার থেকে বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যাবে। বাজার থেকে এত বিপুল পরিমাণ টাকা বেরিয়ে গেলে সেকেন্ডারি বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন মোহাম্মদ হেলাল। তিনি বলেন, অর্থের জোগান বেড়েছে বলেই বাজারে চাঙাভাব ফিরেছে। যদি অর্থের প্রবাহে টান পড়ে, তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব শেয়ারের দামেও পড়বে। তাই যেকোনো নীতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেটির বাস্তবায়ন ও তার প্রভাব নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবা উচিত নিয়ন্ত্রক সংস্থার।