চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশ বাড়তি

  • দেশের ব্যবসায়ীরাও বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছেন। এই সুযোগে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম টনপ্রতি ১০০ ডলারের বেশি বেড়ে গেছে।

  • ভারত রপ্তানি বন্ধের এক দিনের মাথায় বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বেড়ে গেছে। দেশভেদে টনপ্রতি গড়ে ১০০ ডলারের বেশি দাম বেড়েছে।

  • ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার দিনে চীন থেকে প্রতি টন ৩৮০ ডলারে আমদানির চুক্তি করে খাতুনগঞ্জের ট্রেড ইমপ্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। রাতারাতি চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও চড়ছে। হঠাৎ করেই পাইকারিতেও বিক্রি বেড়ে গেছে পণ্যটির। গতকাল দুপুরে দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে
ছবি: প্রথম আলো

ভারত রপ্তানি বন্ধের এক দিনের মাথায় বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বেড়ে গেছে। দেশভেদে টনপ্রতি গড়ে ১০০ ডলারের বেশি দাম বেড়েছে। সেই হিসাবে কেজিপ্রতি রপ্তানিমূল্য বেড়েছে সাড়ে আট টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিকারক দেশগুলো, বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দ্রুত বিকল্প উৎস থেকে আমদানিতে ঝুঁকে পড়ায় বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।

গত সোমবার ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর আগের দিন রোববার বিশ্ববাজারে প্রতি টন পেঁয়াজ ৩৫০–৩৮০ ডলারে কেনাবেচা হয়েছে। চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক এই দরে পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। ভারতের ঘোষণা দেওয়ার জেরে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বেড়ে ৪৬০ থেকে ৪৮০ ডলার পর্যন্ত ওঠে। এই তথ্য অবশ্য পেঁয়াজ আমদানিকারকদের দেওয়া।

এদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার পরও ব্যবসায়ীরা ঋণপত্র খুলছেন। কারণ, দেশে এখন পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে। বাড়তি দামে আমদানির পর দেশে আনা পর্যন্ত প্রতি কেজি খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা। তাই বাড়তি দরে আমদানিতেও পিছপা হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

ভারতের কৃষি ও খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানির শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর ভারতের রপ্তানি করা পেঁয়াজের ২৪ শতাংশই এসেছিল বাংলাদেশে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও শ্রীলঙ্কা ভারতীয় পেঁয়াজের বড় আমদানিকারক। ভারতীয় পেঁয়াজের ৬৭ শতাংশই রপ্তানি হয় এই চার দেশে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা গতকাল ভারতের বিকল্প দেশগুলোর বাজারে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আর সুযোগ বুঝে ওই সব দেশের রপ্তানিকারকেরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গতবার সংকটের সময় এসব বিকল্প দেশ থেকেই দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল।

সোমবার সকালে মিয়ানমারে পেঁয়াজের প্রতি টনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৩৫০ ডলার। এখন তা ৪৬০ ডলারে উঠেছে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ও টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এম এ হাশেম

গত সোমবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার দিনে চীন থেকে প্রতি টন ৩৮০ ডলারে আমদানির চুক্তি করে খাতুনগঞ্জের ট্রেড ইমপ্যাক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এক দিনের ব্যবধানে গতকাল একই মানের পেঁয়াজ ৪৮০ ডলারে আমদানির চুক্তি করেছে চট্টগ্রামের ফলমন্ডির প্রতিষ্ঠান আল মদিনা এন্টারপ্রাইজ।
ট্রেড ইমপ্যাক্সের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, এক দিনের ব্যবধানেই চীনারা এখন টনপ্রতি ১০০ ডলার বেশি চাইছেন।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন পর্যন্ত চীন থেকে পাঁচ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির চুক্তি করেছেন। তবে পেঁয়াজ আমদানির জন্য সবচেয়ে নিকটবর্তী বিকল্প দেশ হলো মিয়ানমার। দেশটিতে এখন লকডাউনের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দুই মাস ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে জাহাজে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এতে অবশ্য সময় লাগবে বেশি।

পেঁয়াজ আমদানিকারক ও টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি এম এ হাশেম প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার সকালে মিয়ানমারে পেঁয়াজের প্রতি টনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৩৫০ ডলার। এখন তা ৪৬০ ডলারে উঠেছে। মিয়ানমারে লকডাউনের কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে দুই মাস ধরে কোনো পণ্য আসছে না। এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

এ ছাড়া বাংলাদেশের সামনে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশ হচ্ছে পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক। এই তিন দেশও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এবার তুরস্ক ও মিসরে পেঁয়াজের ভালো মজুত রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জেনেছেন।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করার আগে পাকিস্তানে প্রতি টনের দাম ছিল ৩৬০–৩৭০ ডলার। তারা এখন চাইছে ৪৮০ ডলার। ভালো মানের হলে ৫০০ ডলারও দাম হাঁকছে। মিসর আর তুরস্কেও এখন ভালো মানের পেঁয়াজ ৪৮০ ডলারের নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।

ভারত রপ্তানি বন্ধের আগে অবশ্য চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক থেকে প্রায় ১১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। গতকাল বেশি দামে আরও এক হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।