চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তি, চাঙা এশিয়ার শেয়ারবাজার

শেয়ার সূচকের দিকে চোখ রাখছেন মুম্বাইয়ের ব্রোকারেজ হাউসের এক কর্মী। ছবি: রয়টার্স
শেয়ার সূচকের দিকে চোখ রাখছেন মুম্বাইয়ের ব্রোকারেজ হাউসের এক কর্মী। ছবি: রয়টার্স

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ধাপের বাণিজ্য চুক্তি করল বলে—সংবাদমাধ্যমে এই খবর বেরোতেই ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শেয়ার সূচক বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে সেনসেক্স (ভারতের প্রধান শেয়ার সূচক) ছিল ৪০ হাজার ৯৪৩ পয়েন্ট, যা তখনই আগের দিনের চেয়ে ৫৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট বেশি। একই সময়ে নিফটি (ভারতের আরেকটি শেয়ার সূচক) ছিল ১২ হাজার ৮১ পয়েন্টে। এত দিন অনেকেই ভাবতেন, বাজার ৪০ হাজারের ওপরে থিতু থাকতে পারবে কি না। এবার তৈরি হলো তার নতুন লক্ষ্য, ৪১ হাজারের ঘরে পা রাখা।

বেশ কিছুদিন ধরেই ভারতসহ এশিয়ার বাজার মার্কিন-চীন বাণিজ্য চুক্তির খবরের ভিত্তিতে ওঠানামা করছে। সন্দেহ নেই, এই চুক্তির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। বিশ্ব বাণিজ্যের ভবিষ্যৎও নির্ভর করছে এই চুক্তির ওপর। ফলে চুক্তি সইয়ের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হলে সেনসেক্স ও নিফটি দ্রুত উঠে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রবৃদ্ধির শ্লথগতিও প্রভাব ফেলতে পারছে না। আবার বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে নেতিবাচক কিছু শোনা গেলে সূচক তরতর করে পড়ে যাচ্ছে।

চীনা সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে, শুল্ক যুদ্ধের অবসানে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের প্রথম চুক্তিটি সই হওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। চীনা সরকারের ঘনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞেরা দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের শুল্ক চুক্তি নিয়ে কথা চালিয়ে যেতে বেইজিং দায়বদ্ধ, এটি প্রথম দফার চুক্তি সম্পন্ন করারই ইঙ্গিত। আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজার মহলেরও আশা, আগামী মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সই হবে, যে খবর বিশ্বজুড়েই বিভিন্ন শেয়ার বাজারকে চাঙা করেছে। সোমবার ভারত ছাড়াও সূচক বেড়েছে জাপান, সাংহাই, হংকংসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। ইউরোপের শেয়ার সূচকগুলোর মুখও ছিল ওপরের দিকে। আজ সকালে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের শেয়ার সূচক ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে সকাল থেকে চীনের শেয়ার সূচক ওঠানামা করছে।

গতকাল সোমবার অবশ্য ভারতে সূচকের উত্থানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও প্রভাব রয়েছে। গতকাল তাঁরা ভারতের বাজারে ৯৬০ দশমিক ৯০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, বেশ কিছুদিন পর শেয়ারবাজারের অনুকূলে একাধিক কারণ কাজ করতে শুরু করেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকও ইতিবাচক ধারায় আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গত অক্টোবরে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় যাত্রীবাহী গাড়ির চাহিদা কিছুটা হলেও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় আগামী ঋণনীতিতেও রিজার্ভ ব্যাংকের সুদ কমানোর সম্ভাবনা আছে। দেশীয় অর্থনীতি চাঙা করতে শিগগির ভারত সরকার আরও ব্যবস্থা নেবে—বাজার সে রকমই আশা করছে। সেই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তো আছেনই। আরও ভালো খবর হচ্ছে, আইফোন ইতিমধ্যে ভারতে ফোন উৎপাদন শুরু করেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট লোকজনের একাংশ মনে করছে, বাজার স্থায়ীভাবে চাঙা হবে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখের হুঁশিয়ারি, ‘বাজারে বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ার কেনা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং ফাটকাবাজরাই এখন বেশি সক্রিয়। তাই যেকোনো সময়েই সূচক আবার পড়তে পারে।’

একই সুরে কথা বললেন বাজার বিশেষজ্ঞ ও দেকো সিকিউরিটিজের কর্ণধার অজিত দে, ‘বাজার এখন এতটাই অনিশ্চিত যে এর গতিবিধি নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন।’