ট্রাক আসতে দেরি দেখেও অপেক্ষা করেন ক্রেতারা

প্রতীকী ছবি

ঘড়িতে তখন দুপুর সাড়ে ১২ টা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে মিরপুরের কালশীতে ওয়াসার গভীর নলকূপ এলাকায় টিসিবির ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিম্ন আয়ের কিছু মানুষ। এঁদের কেউ রিকশাচালক, কেউবা গৃহিণী, আবার কেউ গার্মেন্টস মানে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক, কেউ বাসাবাড়ির গৃহকর্মী। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী দামে পেঁয়াজসহ চাল-ডাল কিনতেই তাঁদের এই অপেক্ষা। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই ট্রাক আসে বেলা সোয়া একটার দিকে। ততক্ষণে আরও অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছেন।

সেখানে শাহনাজ আকতার নামের এক ক্রেতা জানান, টিসিবির ট্রাক থেকে তিনি নিয়মিত চাল, ডাল ও পেঁয়াজ কেনেন। দুপুর ১২টার দিকে পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখেন ট্রাক তখনো আসেনি। সে জন্য পাশের কাঁচাবাজারে গিয়েছিলেন পেঁয়াজ কিনতে। কিন্তু দাম শুনেই ফিরে আসেন, অপেক্ষা করতে থাকেন ট্রাকের জন্য। তিনি আরও বলেন, ‘আমি পোশাক কারখানায় কাজ করি। অসুস্থতার কারণে কাজে যাইনি। অসুস্থ শরীর নিয়েই আধ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছি।’

গতকাল বুধবার মিরপুরের কালশীতে টিসিবির পণ্য বিক্রির দায়িত্ব ছিল ডিলার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন ইসলামের। কালশী মোড়ে তাদের ট্রাক পৌঁছায় বেলা সোয়া একটার দিকে। এরপর শুরু হয় পণ্য বিক্রির কাজ। নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দুপুরে খাওয়ার সময়ও পাননি ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।

ডিলার এন ইসলামের মালিক সিরাজুল ইসলামের ছোট ভাই নয়ন হোসেন ছিলেন পণ্য বিক্রি তদারকির দায়িত্বে। তিনি জানান, টিসিবি থেকে পণ্যগুলো বুঝে পেতে তাঁদের দেরি হয়েছে। এটিই তাঁদের আসতে দেরি হওয়ার কারণ।

কালশীতে ট্রাক থেকে শুধু পেঁয়াজ কেনেন রিকশাচালক জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি জানান, বাজারে পেঁয়াজের দাম চড়া। ট্রাকে এক কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাই তিনি এখান থেকেই পেঁয়াজ কেনেন। তবে এক কেজি পেঁয়াজ পেতে তাঁকে আধঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রি করছিল ডিলার আরীফ ট্রেডার্স। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ওই জায়গায় ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। নারী ও পুরুষের পৃথক দুটি সারি থাকলেও উভয় সারিতেই প্রায় সমসংখ্যক ক্রেতা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ক্রেতাদের মধ্যে পেঁয়াজ কিনতে আসা লোকজনের সংখ্যাই বেশি বলে জানান ডিলারের প্রতিনিধিরা। অনেক ক্রেতাকে নির্ধারিত এক কেজির বেশি পেঁয়াজ দিতে বিক্রেতাদের অনুরোধ করতে দেখা গেছে।

সেখানে মোহাম্মদপুর সাতমসজিদ এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগম পেঁয়াজ কিনতে আসেন। তিনি জানান, প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে তিনি এক কেজি পেঁয়াজ পেয়েছেন। আরও কয়েক কেজি কিনতে চেয়েছিলেন।

খাদিজা বেগম বলেন, ‘বাসায় প্রায় সবাই অসুস্থ। তাই বাধ্য হয়ে বাজারে আসতে হয়েছে। অর্থনৈতিক এই দুরবস্থার সময়ে এক কেজি পেঁয়াজে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বাঁচাতে পারলেও অনেক উপকার হবে।’

ট্রাকসেল থেকে যাঁরা পণ্য কিনছিলেন তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের লোকজন। মোহাম্মদপুরে অনেক রিকশাচালককে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাক দেখে থেমে পেঁয়াজ কিনতে লাইনে দাঁড়াতে দেখা যায়।

মেসার্স আরীফ ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মো. মনির হোসেন বলেন, ‘আজ অনেকেই বেশি বেশি পেঁয়াজ চাইছেন। কিন্তু প্রত্যেক ক্রেতাকে এক কেজি করে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। চার দিন আগেও একজন ক্রেতা ট্রাকসেল থেকে দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারতেন। পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এক কেজি করে বিক্রি করতে বলা হয়েছে।’