দাম এখনো বাড়তি যে কারণে

  • খুচরা বাজারে এখনো প্রতি কেজি ৯০ টাকার নিচে পেঁয়াজ মিলছে না।

  • এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই চাহিদার বড় অংশ জোগান দিচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন আমদানি হওয়া বিকল্প দেশের পেঁয়াজ।

  • গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর দেশের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন।

পেঁয়াজের দাম এখনো বাড়তি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে দাম কমছে না। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে।
ছবি: প্রথম আলো

খুচরা বাজারে এখনো প্রতি কেজি ৯০ টাকার নিচে পেঁয়াজ মিলছে না। বিকল্প দেশ থেকে আমদানি শুরু হওয়ার পরও পেঁয়াজের দাম কেন বাড়তি—এই প্রশ্ন এখন ক্রেতাদের। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই চাহিদার বড় অংশ জোগান দিচ্ছে দেশি পেঁয়াজ। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন আমদানি হওয়া বিকল্প দেশের পেঁয়াজ। কিন্তু বিকল্প দেশ থেকে এখনো চাহিদা অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে না। ফলে বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। তাতেই দাম ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে আমদানিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, এ সপ্তাহ শেষে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে। তাতে দামও কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন আমদানিকারকেরা।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর দেশের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। ঋণপত্র খোলার পর থেকে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ন্যূনতম ২৫ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে।

বন্দর দিয়ে যেদিন পেঁয়াজ আমদানি বাড়ে সেদিন পাইকারি বাজারে দাম কমে যায়। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দর সর্বোচ্চ ৮০-৮৫ টাকায় উঠেছিল। আমদানির কয়েকটি চালান খাতুনগঞ্জে এসে পৌঁছানোর পর এখন দাম কমে ৭৫-৭৭ টাকায় নেমেছে।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক

চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এসব পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। তবে এখনো পরিমাণে কম। এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার টন পেঁয়াজ খালাস হয়েছে। বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় আড়াই হাজার টন। সব মিলিয়ে ভারতের বিকল্প দেশ থেকে পাঁচ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছেছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ব্যবসায়ীরা ৭ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন, তার মধ্য থেকে ৫ হাজার টনের চালান এসে পৌঁছেছে। আমদানির পথে আছে আরও বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। এসব পেঁয়াজ এসে পৌঁছালে দামও কমে আসবে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত ২০-২৬ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীরা ৪১ হাজার ৩৫৪ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। এই পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানোর খরচ দেশভেদে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে প্রায় ৪০ টাকা।

জানতে চাইলে দেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক বলেন, বন্দর দিয়ে যেদিন পেঁয়াজ আমদানি বাড়ে সেদিন পাইকারি বাজারে দাম কমে যায়। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পেঁয়াজের দর সর্বোচ্চ ৮০-৮৫ টাকায় উঠেছিল। আমদানির কয়েকটি চালান খাতুনগঞ্জে এসে পৌঁছানোর পর এখন দাম কমে ৭৫-৭৭ টাকায় নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত ২০-২৬ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ীরা ৪১ হাজার ৩৫৪ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন। এই পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানোর খরচ দেশভেদে প্রতি কেজি ৩৩ থেকে প্রায় ৪০ টাকা। বন্দর থেকে খালাস করে পাইকারি বাজারে পৌঁছানো পর্যন্ত সব মিলিয়ে কেজিপ্রতি মূল্য দাঁড়াবে ৩৬ থেকে ৪৩ টাকা।

গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চীনের পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, মিসরের পেঁয়াজ ৭০-৭২ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা এবং পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের পর টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন এক হাজার টনের কমবেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

পচনশীল পণ্য হওয়ায় কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে পাইকারি বাজারে এই পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

এদিকে গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি চীনের পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, মিসরের পেঁয়াজ ৭০-৭২ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা এবং পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের পর টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন এক হাজার টনের কমবেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এবার করোনায় মিয়ানমারে একাংশে লকডাউন থাকায় স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে। এতে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ এখন সিঙ্গাপুর হয়ে ঘুরপথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে।

অবশ্য পেঁয়াজ আমদানিকারক ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজের সরবরাহ নিয়ে এবার দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এখন প্রতি সপ্তাহেই পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে।