নিষ্ক্রিয় এক লাখ বিও সক্রিয়

সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগ না থাকলে কোনো বিনিয়োগকারী প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারে আবেদন করতে পারবেন না।

শেয়ারবাজার সক্রিয় বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের সংখ্যা এক লাফে এক লাখ বেড়ে গেছে। আর তার বিপরীতে কমেছে অব্যবহৃত ও শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা। গত এক মাসে এ পরিবর্তন ঘটেছে বাজারে।

সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগ না থাকলে কোনো বিনিয়োগকারী প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও শেয়ারে আবেদন করতে পারবেন না। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্তের কারণেই মূলত গত এক মাসে শেয়ারবাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আইপিওতে আবেদন করতে হলে বিনিয়োগকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। পাশাপাশি আইপিওর লটারি পদ্ধতিও তুলে দেওয়া হয়। ১ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে বিএসইসি। যদিও ১ এপ্রিলের পর থেকে এখনো নতুন কোনো আইপিও আবেদন শুরু হয়নি। তবে আইপিও আবেদনের জন্য অনেকে সেকেন্ডারি বাজারে এরই মধ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।

শেয়ারবাজারে বিও হিসাব সংরক্ষণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল। সংস্থাটি কয়েকভাবে প্রতিদিনের বিও হিসাবের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করে থাকে। সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, শেয়ারবাজারে গত ১ মার্চ শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ২০ হাজার ৫২৫। ৫ এপ্রিল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ২২ হাজার ৭৬৮টিতে। সেই হিসাবে প্রায় এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ২ হাজার ২৬১। অব্যবহৃত ও শেয়ারশূন্য পুরোনো বিও হিসাবগুলোর মধ্য থেকেই মূলত সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। কারণ, গত এক মাসে নতুন করে বিও হিসাব খোলা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১৪২টি।

সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ৫ এপ্রিল শেয়ারবাজারে মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬৫ হাজার৭১৮। এর মধ্যে প্রায় ১২ লাখ ৪৩ হাজার বিও হিসাব হয় শেয়ারশূন্য বা কখনো ব্যবহৃত হয়নি। শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ১৪ লাখ ২২ হাজার ৭৬৮। যেসব বিও হিসাবে শেয়ার রয়েছে, সেগুলোকেই মূলত সক্রিয় বিও হিসেবে গণনায় ধরা হয়।

কমেছে অব্যবহৃত ও শেয়ারশূন্য বিও

গত ১ মার্চ শেয়ারবাজারে অব্যবহৃত বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫২২। ৫ এপ্রিল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৭টিতে। অর্থাৎ অব্যবহৃত বিও হিসাবের মধ্য থেকে ৭৬ হাজার ১৪৫টি সক্রিয় হয়েছে গত এক মাসে। এসব হিসাবে এ সময়ের মধ্যে শেয়ার কেনা হয়েছে।

একইভাবে কমেছে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবও। সিডিবিএলের হিসাবে, গত ১ মার্চ শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৯। আর ৫ এপ্রিল তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৩টিতে। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ২২ হাজার ৯৫৬। অর্থাৎ এক মাসে শেয়ারশূন্য প্রায় ২৩ হাজার বিওতে নতুন করে শেয়ার যুক্ত হয়েছে।

কী ভাবছেন বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত আইপিও শেয়ারে আবেদনের জন্যই অনেক বিনিয়োগকারী নতুন করে সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ করেছেন। শেয়ারবাজারে যত বিও হিসাব আছে, তার একটি বড় অংশই ব্যবহার হয় শুধু আইপিও শেয়ারের আবেদনে। অনেক বিনিয়োগকারী আইপিও আবেদনের জন্য এককভাবে ৫০/১০টি বিও হিসাবও সংরক্ষণ করে থাকেন। যদিও নিয়ম অনুযায়ী, আইপিওতে একজন বিনিয়োগকারী একক ও যৌথ নামে দুটির বেশি বিও হিসাব থেকে আবেদন করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধবসহ নানাজনের নামে বিও হিসাব খুলে বছরের পর বছর সেগুলো পরিচালনা করেন অনেক বিনিয়োগকারী। বেশিসংখ্যক বিও থেকে আবেদন করলে আইপিওর লটারিতে শেয়ার জেতার সম্ভাবনা বেশি। এ আশায় অনেকে নানাজনের নামে বিও খুলে তা পরিচালনা করেন। আইপিওতে শেয়ার পাওয়ার পর উচ্চ দামে সেকেন্ডারি বাজারে তা বিক্রি করে বাজার থেকে অর্থ তুলে নেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেরই সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ নেই। এ কারণে আইপিওতে আবেদনের আগে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। তাতেই বাজারে সক্রিয় বিও হিসাবে বেড়ে গেছে।

জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের অধ্যাপক মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, আইপিও আবেদনের আগে সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতার কারণেই মূলত সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্ত সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করছে। পাশাপাশি আইপিওর লটারি প্রথা তুলে দেওয়ার কারণে নতুন করে অনেক বিনিয়োগকারী আইপিওতে আবেদনে আগ্রহী হবেন। এটিও বাজারের জন্য ভালো দিক।