পচনধরা পেঁয়াজ গছিয়ে দিচ্ছে টিসিবি

নির্দিষ্ট পরিমাণ পেঁয়াজ না নিলে অন্য পণ্য বিক্রি করেন না পরিবেশকেরা। ২০ টাকা কেজিতেও পেঁয়াজ নিতে আগ্রহ নেই।

টিসিবির পেঁয়াজে পচন ধরেছে। অপেক্ষাকৃত ভালো পেঁয়াজ বাছাই করে তা অন্য পণ্যের সঙ্গে বিক্রি করছেন পরিবেশকেরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর বেগুনবাড়ী এলাকায়
ছবি: ড্রিঞ্জা চাম্বুগং

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পেঁয়াজের প্রতি কেজি দর মাত্র ২০ টাকা। এত কম দামেও টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের আগ্রহ নেই। কারণ, পেঁয়াজগুলোতে পচন ধরেছে। অন্যদিকে বাজারে দাম বেশ কমে গেছে।

টিসিবির পরিবেশকেরা এখন নতুন কৌশল নিয়েছেন। ক্রেতাদের ভোজ্যতেল ও ডালের সঙ্গে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য করছেন। রাজধানীর বেগুনবাড়িতে গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দেখা যায়, ট্রাকে করে বোতলজাত সয়াবিন তেল, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবির পরিবেশক প্যারাডাইস এন্টারপ্রাইজ। ক্রেতার কোনো ভিড় নেই। মাঝে মাঝে দু–একজন গেলে পেঁয়াজ কেনার শর্ত দেওয়া হয়। তা শুনে বেশির ভাগ ক্রেতাই ফিরে যান। কেউ কেউ অন্য পণ্যের সঙ্গে পেঁয়াজের পরিমাণ কম দেওয়ারও অনুরোধ করেন।

ক্রেতাদের একজন রহিমা খাতুন বলেন, ‘এক কেজি ডালের সঙ্গে আড়াই কেজি পেঁয়াজ গছিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজারের চেয়ে টিসিবির পেঁয়াজের দাম কম। তবে পেঁয়াজ অনেকাংশে পচা।’

টিসিবির ট্রাকে মাঝারি দানার এক কেজি ডালের দাম ৫০ টাকা, যা বাজারের চেয়ে ৩০ টাকা কম। পাঁচ লিটারের এক বোতল তেলের দাম ৪০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার সাশ্রয় দেড় শ টাকার মতো। তবে ডালের সঙ্গে আড়াই কেজির পাশাপাশি তেলের সঙ্গে কমপক্ষে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ গছিয়ে দেন পরিবেশকেরা।

টিসিবির পরিবেশক প্যারাডাইস এন্টারপ্রাইজের মালিক শরিফুজ্জামান খান বলেন, ক্রেতাদের কেউ পেঁয়াজ নিতে চায় না। অথচ টিসিবি পেঁয়াজই বেশি দিচ্ছে।

শরিফুজ্জামান খান ছাড়াও টিসিবির ১৫ জন পরিবেশকের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তাঁরা প্রায় সবাই দাবি করেন, টিসিবি যে বিদেশি পেঁয়াজ দিচ্ছে, বাজারে তার চাহিদা নেই। পচন ধরার পাশাপাশি পেঁয়াজে চারা গজিয়েছে।

ভারত গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাজার সামাল দিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে টিসিবি। গত অক্টোবর–নভেম্বরে টিবিসির পেঁয়াজ কিনতে ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন ছিল। দেশে মৌসুম শুরু হওয়া এবং ভারত গত ১ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় বাজারে পেঁয়াজের দাম একেবারেই কমে গেছে।

সংস্থাটির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মোট দেড় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। তবে কিছু পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ বাতিল করা হয়েছে। ৭০ হাজার টনের মতো পেঁয়াজ আগামী মার্চ পর্যন্ত আসবে। এগুলো কেনার প্রক্রিয়া বাতিলের সুযোগ ছিল না। তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ বিক্রির জন্য প্যাকেজ ব্যবস্থাকে এই মুহূর্তে বেশি কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে না।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল দেখা যায়, ভালো মানের বিদেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকার আশপাশেই পাওয়া যাচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫–৪০ টাকা কেজিতে। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়তমালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মৌসুমের সময় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কৃষক, ব্যবসায়ী, এমনকি টিসিবিও বেঁচে যেত।