পেঁয়াজ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওয়াজ

  • পেঁয়াজের দর, মজুত, আমদানি ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এতে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

  • প্রতি কেজির দাম আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

  • বর্তমান মজুতে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত চলবে।

প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে

দিনে দিনে পেঁয়াজের কেজি আবার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। আর এ নিয়ে ইনিয়ে–বিনিয়ে কথা বলে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মন্ত্রণালয় বলেছে, পেঁয়াজের মজুত ভালো আছে, কোনো ঘাটতি নেই, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিও হচ্ছে। দর কমে আসবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। আর সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এসে পৌঁছাতে শুরু করেছে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের মজুত কত এবং কোন কোন দেশ থেকে কোন পথে পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকায় তাঁর কাছ থেকেও জানতে চাওয়া যায়নি।
বাণিজ্যসচিব মো. জাফর উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে প্রথম আলোকে জানান, তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আসছে। মজুতের পরিমাণ বলতে না চাইলেও আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি।

পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সরকার প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয় বলছে, পেঁয়াজের আমদানি ও সরবরাহ বেড়েছে। কোনো ঘাটতি নেই। উৎপাদনকারী কৃষকেরা পেঁয়াজের বিক্রি বাড়িয়েছেন বাজারে। আমদানি করা পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে এলে দাম কমে আসবে।

কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত আমদানি ও সরবরাহ কত বেড়েছে, তা আর বলেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ফলে মূল্যবৃদ্ধির তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে আসবে বলে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তা বিশ্লেষণ ছাড়া। অর্থাৎ অনুমানের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ নিয়ে বাণিজ্যসচিব বলেন, ঋণপত্র খোলা ও খালাসের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ায় এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য বলা মুশকিল।

মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, আমদানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী দিচ্ছে সব ধরনের সহযোগিতা। অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ, পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ক্রেতাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৩০ টাকা কেজি দরে দেশব্যাপী ট্রাক সেল করছে। ই-কমার্সের মাধ্যমেও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এ তথ্যেও ফাঁক রয়েছে। কারণ, কতটি ট্রাকের মাধ্যমে, কত কেজি করে এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে কী পরিমাণ পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে, এ বিষয়ে কিছুই জানায়নি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্যসচিব অবশ্য বলেন, প্রায় ৩০০ ট্রাকের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিজনকে দেওয়া হচ্ছে দুই কেজি করে পেঁয়াজ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চাহিদা অনুযায়ী বাজারে পেঁয়াজের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ দেশব্যাপী স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে বাজার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। তবে অভিযান কীভাবে জোরদার হলো, আগের চেয়ে বাড়ল কি না, অভিযানের প্রভাব কী, এসব ব্যাপারে বলেনি মন্ত্রণালয়।

ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় বলেছে, পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সরকার প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ভারত গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়। এ বছরও দেশটি একই কাজ করেছে সেপ্টেম্বরের শুরুতে এবং একই কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দেশের বাজারে। অভিজ্ঞতা তাহলে কোথায় কাজে লাগানো হলো, এ প্রশ্নের জবাবে জাফর উদ্দীন বলেন, টিসিবি এবার সতর্ক ছিল এবং প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, সরকার পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, আমদানিকারকদের চাহিদা অনুযায়ী দিচ্ছে সব ধরনের সহযোগিতা। অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ, পরিবহনসহ সব ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজ পরিবহনে ব্যবসায়ীরা সত্যিই সহযোগিতা পাচ্ছেন। পেঁয়াজের ট্রাকগুলোকে এখন পথে পথে চাঁদা দিতে হচ্ছে না, এমন তথ্য রয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। ট্রাকের কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, তা–ও এখন না দেখেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে আসবে। কিন্তু অল্প সময়টা যে কত অল্প এবং বিপুল পরিমাণটাই যে কত বিপুল, তা স্পষ্ট নয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যে।

পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানালে এনবিআর তা নাকচ করে দেয়। দুই সপ্তাহ পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আবার অনুরোধ করলেও এনবিআর শেষ পর্যন্ত রাজি হয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলার পর।

ভোক্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় বলেছে, পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সরকার প্রচলিত আইনে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাণিজ্যসচিব জাফর উদ্দীন বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে এবার অনেকেই জরিমানা খেয়েছেন।

টিসিবির বাজারদর অনুযায়ী, গতকাল মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৯০ থেকে ১১০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা।