প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ভূমিকায় সূচক বাড়ল
শেয়ারবাজারে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল মঙ্গলবার সূচক ও লেনদেন বেড়েছে। তবে এ বৃদ্ধি আগের তিন দিনে যা কমেছিল, সেই তুলনায় বেশি নয়।
এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৬৫৮ পয়েন্ট। ইতিবাচক প্রবণতা দিয়ে ডিএসইতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় লেনদেন শুরু হয়। এরপর ১৫ মিনিট তা নিম্নমুখী ছিল। পরে আবার বাজার উঠতে থাকে এবং তা বেলা পৌনে একটা পর্যন্ত চলে। এই সময়ে সূচক বাড়ে ৪৫ পয়েন্ট। কিন্তু এরপরই আবার বাজার নিম্নমুখী হতে থাকে। বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন হয়। বেলা দুইটা পর্যন্ত সূচক কমতে থাকে এবং তা প্রায় আগের দিন সোমবারের অবস্থানে ফিরে আসে। তবে সেখান থেকে শেষ দিকে আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাজার।
ডিএসইতে গতকাল ৩১৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে আগের তুলনায় শেয়ারের দর বেড়েছে ১৬৬টির, কমেছে ১০৫টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। এ ছাড়া লেনদেন হওয়া ৩৯টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেড়েছে ১০টির, কমেছে ১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩টির দর। ঢাকার বাজারে এদিন ৩৩৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি ৫৬ লাখ ৭ হাজার টাকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয় মোজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং মিলসের। আর ১১ কোটি ৫২ লাখ ৩৭ হাজার টাকার লেনদেন নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকে বেক্সিমকো ফার্মা। লেনদেনে শীর্ষে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে আমান ফিড, শাহজিবাজার পাওয়ার, গ্রামীণফোন, জাহিন স্পিনিং, ইউনাইটেড পাওয়ার, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল ও এমারল্ড অয়েল।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৪৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৫৮ পয়েন্ট। লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৫টির, কমেছে ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩৬টির। মোট লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকার।
শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হেলাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবস্থাটা এমন হয়ে গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সহযোগিতা করলেই বাজার উঠতে থাকে, তাঁরা নীরব থাকলেই বাজার পড়তে থাকে। আবার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ এত কম যে কোনোভাবেই চিন্তা করা যায় না সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মনে কোনো আস্থার আশা জেগেছে।’
আস্থার আশা কেন জাগছে না—এর ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ‘জাগছে না, কারণ আমাদের শেয়ারবাজার এখনো মূলত জুয়াড়ি ও গুজবনির্ভর।’
ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইদুর রহমান মনে করেন, বাজারে গতি আনার এখন একটি বড় নিয়ামক হতে পারে মার্চেন্ট ব্যাংককে দেওয়া ব্যাংকের ঋণসীমা (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) তুলে দেওয়া।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আগে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল না। সে সময় ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে যে বিনিয়োগ করত, তা সরাসরি ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ব্যাংকগুলো মার্চেন্ট ব্যাংকিং ও ব্রোকারেজ কার্যক্রমকে পৃথক সহযোগী প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে পরিচালনা করার পদক্ষেপ নেয়। আর এসব প্রতিষ্ঠানে খাটানো তহবিলও পরিণত হয় ঋণে।
সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংককে দেওয়া ব্যাংকের ঋণসীমা তুলে দিলে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা অনেক বাড়বে, বাজারও ভালো দম পাবে।