বাধ্যতামূলক হলেও ন্যূনতম শেয়ার নেই ৪১ কোম্পানিতে

  • নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সব সময় ওই কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকা বাধ্যতামূলক।

  • পরিচালকদের এককভাবে স্ব স্ব কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণও বাধ্যতামূলক।

  • এককভাবে ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর তালিকাভুক্ত ৯ কোম্পানির ১৭ পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করে বিএসইসি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৪১ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন না। এবার এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সর্বশেষ আগস্ট শেষের শেয়ারধারণ সংক্রান্ত তথ্য থেকে এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। বিএসইসি ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম ৪১ কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকার তথ্য নিশ্চিত করলেও এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নিয়ম অনুযায়ী তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা বাধ্যতামূলক। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করে চলেছে ৪১ কোম্পানি।

উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ ছাড়াও পরিচালকদের এককভাবে স্ব স্ব কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ারধারণও বাধ্যতামূলক। এককভাবে ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ হওয়ায় ২০ সেপ্টেম্বর তালিকাভুক্ত ৯ কোম্পানির ১৭ পরিচালকের পদ শূন্য ঘোষণা করে বিএসইসি। এবার সম্মিলিত শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে নতুন পরিচালক বসানোসহ বিএসইসির পক্ষ থেকে আইনি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তাভাবনা ও প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ২০১১ সালে ন্যূনতম শেয়ারধারণ সংক্রান্ত আইনটি করা হয়। আইন করা হলেও সেটির পরিপালনের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে আইনটি করার পর তালিকাভুক্ত হওয়া অনেক কোম্পানিও ন্যূনতম শেয়ারধারণের শর্ত মানেনি। আবার অনেক পরিচালক হাতে থাকা সব শেয়ার ঘোষণা ছাড়াই বিক্রি করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে গত মে মাসে বিএসইসির পুনর্গঠিত কমিশন ন্যূনতম শেয়ারধারণ সংক্রান্ত আইনটি পরিপালনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তারই অংশ হিসেবে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ ৪৪ কোম্পানিকে আইন পরিপালনের জন্য ৬০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে গত ২৯ জুলাই চিঠি দেয় বিএসইসি। সেই সময় শেষ হবে আগামী ২৭ অক্টোবর।

নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক বাজারে শেয়ার কেনাবেচা করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে তাঁদের ৩০ দিন সময় দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করতে হয়। আবার কোম্পানিসংশ্লিষ্টদের শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।

সাধারণত কোম্পানির আর্থিক হিসাব বছর শেষ হওয়ার দুই মাস আগে থেকে এ নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়, আর শেষ হয় বার্ষিক হিসাব বিবরণী কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ না হওয়া পর্যন্ত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানির আর্থিক হিসাব বছর জুলাই-জুনভিত্তিক। ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো যাতে এ নিষিদ্ধ সময়ে শেয়ার কেনার সুযোগ পায়, সে জন্য বিধানটি এদের ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়। তারপরও ৪১ কোম্পানির বেশির ভাগ উদ্যোক্তা-পরিচালক শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখাননি। তবে কয়েকটি কোম্পানি শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখিয়ে বিএসইসির কাছে আরও কিছুদিন বাড়তি সময় চেয়েছে।

আইন অনুযায়ী যেহেতু কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে ৩০ দিন আগে ঘোষণা দিতে হয়, তাই ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেওয়ার সুযোগ নেই। ২৭ অক্টোবর বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শেয়ার কিনতে হলে ৩০ দিন আগে ঘোষণা দেওয়ার সময়সীমা এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো নতুন করে কোনোভাবেই মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে বিধান দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব ধরনের শেয়ার কেনাবেচা ও স্থানান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত যারা আইনটি পরিপালন করবে না, সেসব কোম্পানিতে নতুন পরিচালক নিয়োগ করাসহ আইনগত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সাধারণ শেয়ারধারীদের মধ্যে যাদের ২ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার রয়েছে, তাদের মধ্য থেকেই আইন অনুযায়ী নতুন পরিচালক নিয়োগ করা হতে পারে।

এদিকে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো নতুন করে কোনোভাবেই মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে বিধান দিয়েছে বিএসইসি। পাশাপাশি ন্যূনতম শেয়ারধারণে ব্যর্থ কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সব ধরনের শেয়ার কেনাবেচা ও স্থানান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিএসইসি এখন ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সব ধরনের আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে।