বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে আবেদন বেক্সিমকো সিনথেটিকসের

বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো সিনথেটিকস। শেয়ারবাজারে এটি বেক্স সিনথেটিকস নামে পরিচিত। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি সাধারণ শেয়ারধারীদের হাতে থাকা সব শেয়ার কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নেওয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে (এক্সিট) যাবে।

বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দিতে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করেছে। আজ বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানিয়েছে কোম্পানিটি। সেখানে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য বিএসইসির করা ‘এক্সিট পরিকল্পনার’ আওতায় বেক্স সিনথেটিকস কর্তৃপক্ষ বিএসইসিতে আবেদন করেছে। এক্সিট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে থাকা ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৩টি শেয়ার কিনে নেবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে লেনদেন বন্ধের আগে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৮ টাকা ৪০ পয়সা।

বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেক্সিমকো সিনথেটিকস এক্সিট পরিকল্পনার আওতায় শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কমিশনে আবেদন করেছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আজই আবেদনটি আমাদের হাতে এসেছে।’ কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি কত টাকা ফেরত দেবে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো চিঠিটা পুরোটা পড়িনি। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে আমাদের নীতিমালা রয়েছে, সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এক্সিট পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি কোনো সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে থাকে, সে ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যেই শেয়ার কিনে নিতে হবে উদ্যোক্তাদের।

গত বছরের ডিসেম্বরে বিএসইসি যে এক্সিট পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সেখানে বলা আছে, যদি কোনো সিকিউরিটিজের বাজারমূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে থাকে, সে ক্ষেত্রে অভিহিত মূল্যেই শেয়ার কিনে নিতে হবে উদ্যোক্তাদের।
এদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে লেনদেন বন্ধের আগে বেক্সিমকো সিনথেটিকসের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৮ টাকা ৪০ পয়সা। নিয়ম অনুযায়ী, এখন কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে নিলে তাতে সর্বশেষ বাজারমূল্যের চেয়ে শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৬০ পয়সা বেশি পাবেন শেয়ারধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রতিটি শেয়ারের জন্য ১০ টাকা করে বিনিয়োগকারীদের ফেরত দিলে তাতে কোম্পানিটির খরচ হবে প্রায় ৫৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

বিএসইসির আদেশে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই দিনই কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে বেক্স সিনথেটিকসের শেয়ারের লেনদেন স্থগিত রয়েছে। বিএসইসির আদেশে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানিটির লেনদেন স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই দিনই কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু তালিকাচ্যুতির সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় এত দিন কোম্পানিটির তালিকাচ্যুতির প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। এরপর বিএসইসির পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য ‘এক্সিট পরিকল্পনা’ করা হয়। সেই পরিকল্পনার আওতায় এখন বেক্সিমকো সিনথেটিকস তালিকাচ্যুতির উদ্যোগ নিয়েছে।

১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করে বেক্সিমকো সিনথেটিকস। ১৯৯৩ সালে এটি ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। আর ১৯৯৫ সালে তালিকাভুক্ত হয় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। শুরু থেকে কোম্পানিটি কৃত্রিম তন্তু বা পলিয়েস্টার সুতা তৈরি করত। শুরুতে বেশ ভালো ব্যবসা করলেও ধীরে ধীরে একই ধরনের আমদানি করা সুতার আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় মার খেতে শুরু করে কোম্পানিটির ব্যবসা। এর ফলে ২০১৩ সাল থেকে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারছে না। টানা সাত বছর ধরে কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে আসে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। উৎপাদন বন্ধের পর কোম্পানিটি শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হওয়ার উদ্যোগ নেয়।