বিপণনে ‘প্রভাব বিস্তারকারী’দের প্রভাব

বিশ্বজুড়েই বিপণনব্যবস্থায় বদল এসেছে। জনপ্রিয় হচ্ছে যোগাযোগমাধ্যম।
ছবি: সংগৃহীত

২০০৯ সালের আমেরিকান সিনেমা দ্য জোনসেস অনেকেই দেখেছেন। বিপণনব্যবস্থার সর্বোচ্চ উদ্ভাবন বলা যায় এই সিনেমাকে, যেখানে সাধারণ মানুষের মধ্যে সাধারণ পরিবার সেজে মিশে যান জোনস পরিবারের মানুষেরা। আদতে তাঁরা আপাদমস্তক বিপণনকর্মী। তাঁদের পোশাক, বাড়ি, গাড়ি, খাবার, জীবনযাপন—সবকিছুই চলমান বিজ্ঞাপন হয়ে ওঠে আশপাশের মানুষের জন্য।

২০০৯ সালে জোনাসদের চলমান বিজ্ঞাপন খুব কাল্পনিক মনে হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এসে এটি খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারকাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রভাব বিস্তার করছেন বিপণন ব্যবস্থায়। সাধারণের ভাষায় তাঁদের বলা হয়, ‘ইনফ্লুয়েন্সর’ বা প্রভাব বিস্তারকারী।

২০০৯ সালে জোনাসদের চলমান বিজ্ঞাপন খুব কাল্পনিক মনে হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে এসে এটি খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তারকাদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রভাব বিস্তার করছেন বিপণন ব্যবস্থায়। সাধারণের ভাষায় তাঁদের বলা হয়, ‘ইনফ্লুয়েন্সর’ বা প্রভাব বিস্তারকারী। ইনফ্লুয়েন্সরদের জীবনযাপনই চলমান বিজ্ঞাপন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসরণকারীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বিপণন কার্যক্রমে তুলে আনা হচ্ছে এই সব প্রভাব বিস্তারকারীকে।

ছোট ব্যবসা উদ্যোগ থেকে নামীদামি অনেক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট এসব ব্যক্তিকে ব্যবহার করছেন ব্যবসার পসারে। শুরুতে খুব বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হলেও করোনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সরদের প্রভাব।

গত এক দশকে বিশ্বজুড়েই বিপণনব্যবস্থায় বদল এসেছে। সরাসরি বিজ্ঞাপনের চেয়ে ব্লগ, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণায় জোর দিচ্ছে।

গত এক দশকে বিশ্বজুড়েই বিপণনব্যবস্থায় বদল এসেছে। সরাসরি বিজ্ঞাপনের চেয়ে ব্লগ, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণায় জোর দিচ্ছে, তবে করোনায় তা বেড়েছে অনেকটাই।

এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনের ডিজিটাল অ্যাডভারটাইজিং ম্যানেজার নাইমুল হক বলেন, করোনায় অনেক দিন বাইরে শুটিং বন্ধ ছিল, এই সময়ে ব্র্যান্ডগুলোর সামনে একমাত্র উপায় ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সর ব্যবহার করা। ইনফ্লুয়েন্সররা নিজেরাই পণ্যের ছবি তোলেন, ভিডিও করেন, সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেন। এতে সে সময় বিপণন অনেক সহজতর হয়।

ফারহানা নিলয় পেশায় একজন চিকিৎসক। তিনি ইনফ্লুয়েন্সর হিসেবে কাজ করছেন ২০১৪ সাল থেকে। তারকা নন, এমন ইনফ্লুয়েন্সরদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য, যিনি কাজ শুরু করেছিলেন ফেসবুক থেকে। এখন পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন ইউনিলিভার, গার্নিয়ার, বডিশপ, সিঙ্গার, ভিভো, দারাজ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের সঙ্গে। নিলয় জানান, করোনার শুরুতে তাঁর কাজ কমে এলেও অচিরেই তা বাড়তে শুরু করে। তিনি এখন সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি কাজ পাচ্ছেন।

করোনা একটা বিশেষ অবস্থা তৈরি করে, যাতে আমাদের বিপণনকৌশল সময়োপযোগী করতে হয়। আমরা তখন ডিজিটাল মিডিয়াতে জোর দিই বেশি, যেহেতু মানুষ সেখানেই বেশি সময় কাটাত। ফলে করোনায় প্রভাব বিস্তারকারীদের ব্যবহার বেড়েছে।
আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের (ডানো) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা গালীব বিন মোহাম্মদ

জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ পপ অব কালারের অ্যাডমিন জান্নাতুল মাওয়ার পেশাই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর। টিংকার জান্নাত মীম নামে পরিচিত এই ইনফ্লুয়েন্সর জানান, আগে যেখানে মাসে একটি বা দুটি পণ্যের প্রচারণা চালাতেন, এখন তা বেড়ে হয়েছে পাঁচটি। একই সঙ্গে একই ধরনের পণ্য নিয়ে আলাদা ব্র্যান্ডগুলোও আসছে প্রচারণার জন্য, যা আগে কখনো হতো না।

আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেডের (ডানো) প্রধান বিপণন কর্মকর্তা গালীব বিন মোহাম্মদ বলেন, ‘করোনা একটা বিশেষ অবস্থা তৈরি করে, যাতে আমাদের বিপণনকৌশল সময়োপযোগী করতে হয়। আমরা তখন ডিজিটাল মিডিয়াতে জোর দিই বেশি, যেহেতু মানুষ সেখানেই বেশি সময় কাটাত। ফলে করোনায় প্রভাব বিস্তারকারীদের ব্যবহার বেড়েছে।’

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল অ্যাডভারটাইজিংয়ের করা এক জরিপ অনুযায়ী ৭৫ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইনফ্লুয়েন্সরদের দিয়ে বিপণন করতে পছন্দ করে এবং ৩৬ শতাংশ মনে করে, এই পদ্ধতি কার্যকর। আন্তর্জাতিক বাজারে তারকা নন, এমন ইনফ্লুয়েন্সরও আছেন, যাঁদের মাসিক আয় আর আট মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার জন্য প্রতি পোস্টে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করেন, যদিও বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েন্সরদের আয় সে তুলনায় খুবই কম।

বিপণন সংস্থা গ্রের বাংলাদেশ প্রধান গাউসুল আলম শাওন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্যর ওপর নির্ভর করে আমরা নির্ধারণ করি সেখানে প্রচারণার কাজে তারকা ব্যবহার করব, নাকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত মুখ। যখন খুব নির্দিষ্ট ভোক্তার জন্য বিশেষ কোনো পণ্য তৈরি করি, আমরা চেষ্টা করি সেই শ্রেণিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এমন মানুষকে ব্যবহার করতে। বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারকারীদের খুব সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা হলেও ধীরে ধীরে বিজ্ঞাপনে তাঁদের চাহিদা বাড়ছে।’