বড় পতনের কারণ না পেয়ে তদারকি বাড়িয়েছে বিএসইসি

পরপর দুই দিনের বড় পতনে শেয়ারবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল সোমবার এক দিনেই ১২৮ পয়েন্ট বা সোয়া ২ শতাংশের বেশি কমে গেছে। আগের দিন অর্থাৎ রোববার সূচকটি কমেছিল ১৪৩ পয়েন্ট বা আড়াই শতাংশের বেশি। চাঙা বাজারে হঠাৎ এমন বড় পতনের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ কারণে বাজারে তদারকি বাড়িয়েছে সংস্থাটি।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দিনের পতনেই ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি কমেছে ২৭১ পয়েন্ট বা পৌনে ৫ শতাংশ। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি নেমে এসেছে সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের মাইলফলকের নিচে। এ কারণেই মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারেরও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে গতকাল। লেনদেনের প্রথম ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও উচ্চ সম্পদশালী ব্যক্তিদের দিক থেকে বিক্রির চাপ ছিল বেশি। তাতে সূচক কমতে শুরু করে। তখন অন্য বিনিয়োগকারীদের দিক থেকেও বিক্রির চাপ বেড়ে যায়।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশের বিপুল অর্থ আটকে গেছে। কারণ, দাম কমে গেছে। ফলে অনেক বিনিয়োগকারী আটকে গেছে। এতে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমে গেছে। আবার একটানা উত্থানের ফলে কিছু শেয়ারের বিনিয়োগকারীরা বেশ ভালো মুনাফা করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁরা সেই মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এতে বাজারে বিক্রির চাপ কিছুটা বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন,গত তিন মাসে ২৪ টাকার শেয়ারের দাম একটানা বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের বড় একটি অংশ ওই শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি।

এদিকে গতকাল থেকে বাজারে তদারকি জোরদার করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল দিনভর বাজার তদারকির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু সন্দেহজনক লেনদেনের প্রাথমিক তথ্যও মিলেছে। এসব লেনদেনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঢাকার বাজারের ব্লু চিপস বা ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত ৩০ কোম্পানির মধ্যে ২৪টিরই দাম কমেছে গতকাল। এ কারণে ব্লুচিপস কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ডিএস–৩০ সূচকটি কমেছে ৬৮ পয়েন্ট বা সোয়া ৩ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার একপর্যায়ে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে। ডিএস–৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রভাব সূচকে বেশি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলে তা ডিএসইএক্স সূচকেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৭৯০ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৯ কোটি টাকা বেশি। লেনদেনে শীর্ষ ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির প্রায় ১৪০ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। দিন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৬ টাকা বা সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি কমে নেমে এসেছে সাড়ে ৬৯ টাকায়। লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো গ্রুপেরই আরেক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা। গতকাল ঢাকার বাজারে বেক্সিমকো ফার্মার ৬২ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। দিন শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে ৮ শতাংশ বা ১৪ টাকা কমে নেমে এসেছে ১৫০ টাকায়।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি এদিন ৩৯৭ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমেছে। সেখানকার বাজারে এদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি টাকার, যা আগের দিনের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম।