ভালো সূচকটি সবচেয়ে খারাপ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও দিশেহারা অবস্থা বিনিয়োগকারীদের। কারণ, টানা দরপতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এসব কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে বেশি। এ কারণে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বাছাই করা ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকটি প্রায় অর্ধযুগ আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী গতকাল দিন শেষে ডিএস-৩০ সূচকটি ১০ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ১ হাজার ৪৯৯ পয়েন্টে, যা প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি এ সূচক ১ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। চলতি বছরের পুরোটা সময়ে টানা দরপতনের ফলে এ সূচক সবচেয়ে বেশি পেছনের দিকে ফিরে গেছে।

ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারের সবচেয়ে ভালো কোম্পানি হিসেবে স্বীকৃত। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য এসব কোম্পানিতেই বেশি বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু সেগুলোর দামই এবারের দরপতনে সবচেয়ে বেশি কমেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মার্চের পর থেকে বিদেশি বিনিয়োগে টানা নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ বিনিয়োগই ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোতে। তাই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি বেড়ে যাওয়া মানে এসব শেয়ারের বিক্রিও বেড়ে যাওয়া, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দামেও।

ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত ৩০ কোম্পানির গত এক বছরের বাজারমূল্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দরপতন ঘটেছে বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৭১ শতাংশ কমেছে। এর পরে রয়েছে ইফাদ অটোস। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এক বছরে ৬০ শতাংশ কমেছে।

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদন অনুযায়ী গতকালের বাজারেও সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে যে তিনটি কোম্পানি, সেগুলো ডিএস-৩০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানি। সেগুলো হলো স্কয়ার ফার্মা, রেনেটা ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো।

>

সবচেয়ে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচকটি অর্ধযুগ আগের অবস্থানে ফিরে গেছে

এদিকে টানা দরপতনের ধারাবাহিকতায় গতকালও সূচক কমেছে দুই বাজারেই। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ২ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৪১৮ পয়েন্টে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি কমেছে ১ পয়েন্টের মতো। বাজারসংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পতন ঠেকাতে দিনের শুরু থেকে বেশ সক্রিয় ছিল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুরোধে এসব প্রতিষ্ঠান সূচক টেনে তোলার চেষ্টা চালায়। এ কারণে এদিন লেনদেন শুরুর প্রথম ১০ মিনিট ডিএসইএক্স সূচকটি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এরপর সেটি আবার কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে তা আগের দিনের চেয়ে ৩৭ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৩৮৩ পয়েন্টে নেমে আসে। এরপর সূচকটি আবারও টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চেষ্টা সফল হয়নি। তাই দিন শেষে সূচকের পতন দিয়েই লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচকের চেয়ে এদিন দুই বাজারে লেনদেন বেশ কমে গেছে।

ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেন নেমে এসেছে ২৫৪ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ২৮ কোটি টাকা কম। আর সিএসইতে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১২ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় তিন কোটি টাকা কম।