ভোলাও হতে পারে পেঁয়াজভান্ডার

  • খরচ বেশি হওয়ায় ভোলার কৃষকেরা পেঁয়াজের আবাদে কম আগ্রহী। ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের বীজ ও প্রণোদনা পেলে তাঁরা পেঁয়াজ চাষ করবেন।

  • কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ভোলা জেলায় ২০১৮-১৯ রবি মৌসুমে ৬০৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে।

  • কৃষকেরা আরও জানান, আমন ধান ঘরে তুলতে ৩০ থেকে ৫০ দিন দেরি হওয়ার কারণেও অনেকে পেঁয়াজ চাষ করতে পারেন না।

স্তূপ করে রাখা খেত থেকে তোলা পেঁয়াজ
ফাইল ছবি

ভোলা জেলায় পেঁয়াজ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সময়মতো আবাদ করলে ও আবহাওয়া বৈরী না হলে বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু খরচ বেশি হওয়ায় চাষিদের আগ্রহ কম। তবে ন্যায্যমূল্যে উন্নত বীজ সরবরাহ ও সংরক্ষণাগার নির্মাণের পাশাপাশি সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়া হলে তাঁরা পেঁয়াজ চাষ করবেন বলে জানান।

একই অভিমত কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের। তাঁরা বলেন, সরকারি হিসাবে ভোলায় ৭৪টি চরাঞ্চলে পেঁয়াজ চাষের উপযোগী পর্যাপ্ত জমি আছে। এসব জমিতে এখন কৃষকেরা কম খরচে তরমুজ, বাঙ্গি ও ক্ষীরার আবাদ করেন। পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেওয়া হলে তাঁদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা যাবে।

দৌলতখান উপজেলার দুর্গম মদনপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ফারুক দৌলত বলেন, অগ্রহায়ণের শুরুতে চরের জমি শুকিয়ে যায়। কিন্তু খরচের কারণে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ করেন না। তাঁরা সবজি আর সয়াবিনের আবাদ করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ভোলা জেলায় ২০১৮-১৯ রবি মৌসুমে ৬০৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। গড় ফলন ছিল হেক্টরে সাড়ে ৬ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৬২০ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। গড় ফলন হয়েছে হেক্টরে ৮ মেট্রিক টন। তবে ভোলা সদর উপজেলায় হেক্টরপ্রতি ১৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। কৃষি বিভাগ হেক্টরে ১২-১৪ মেট্রিক টন হলে সেটাকে বাম্পার ফলন বলে।

ভোলা সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সবুজ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার নামের খামারের পরিচালক ইয়ানুর রহমান (বিপ্লব মোল্লা) জানান, গত রবি মৌসুমে তিনি প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ৬ একর জমিতে আবাদ করে প্রায় ১ হাজার মণ বা ৪০ মেট্রিক টন উন্নত জাতের পেঁয়াজ পেয়েছেন। একরপ্রতি তাঁর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন, যা এখন ভালো দামে বিক্রি করছেন।

ইয়ানুর রহমান জানান, পেঁয়াজ তোলার শুরুতে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে ৪০০ মণ বা ১৪ মেট্রিক টন বিক্রি করেছেন। বাকি ৬০০ মণ বা ২৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশীয় জোগার পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করেছেন। এ পদ্ধতিতে ১৫ শতাংশ ঘাটতি হলেও পেঁয়াজের কোনো ক্ষতি হয়নি। শতভাগ ভালো আছে। এ জন্য তাঁর প্রচুর ব্যয় করতে হয়েছে। সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা।

ভোলার সবুজ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার খামারের পরিচালক ইয়ানুর রহমান পেঁয়াজ সংরক্ষণের বিষয়টি দেখভাল করছেন। সম্প্রতি জেলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চরে
ছবি: প্রথম আলো

ইয়ানুর রহমান জানান, আগামী মৌসুমে ২৫ একরে পেঁয়াজের আবাদ করবেন বলে আশা করছেন।

ইয়ানুর রহমানসহ অন্তত ২৫ জন কৃষক প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভোলায় পেঁয়াজ আবাদ সম্ভব। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও পাঠানো সম্ভব। এ জন্য অবশ্য তাঁদের চারটি দাবি আছে—

  • ১. ন্যায্যমূল্যে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করতে হবে। কারণ, এক কেজি বীজের দাম আট হাজার টাকা।

  • ২. পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য প্রতি উপজেলায় সংরক্ষণাগার বানাতে হবে। এ জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ নিশ্চিত করতে হবে।

  • ৩. সংরক্ষণাগারে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ দিতে হবে।

  • ৪. সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে।

কৃষকেরা আরও জানান, আমন ধান ঘরে তুলতে ৩০ থেকে ৫০ দিন দেরি হওয়ার কারণেও অনেকে পেঁয়াজ চাষ করতে পারেন না। তাঁরা এই অঞ্চলে ১০০ দিনে ফলন ঘরে তোলা সম্ভব, এমন জাতের আমন ধানের আবাদ জনপ্রিয় করে তুলতে হবে।

১০০ দিনে পেঁয়াজ ঘরে তোলা সম্ভব। কিন্তু ভোলায় যে জাতের আমনের আবাদ হয়, সেটির ফলন পেতে ১৩০-১৫০ দিন সময় লাগে। বাজারে এই ধানের নতুন একটি জাত এসেছে, যার ফলন পাওয়া যায় ১০০ দিনে।
ভোলা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন

জানতে চাইলে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হরলাল মধু প্রথম আলোকে বলেন, কৃষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক। পেঁয়াজ তোলার সময় বৃষ্টি হলে এটি সংরক্ষণগুণ নষ্ট হয়। তাই মৌসুমের শুরুতেই আবাদ করতে হবে। আর আবাদ বাড়াতে চরাঞ্চলকে বেছে নেওয়া উত্তম।

ভোলা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ দিনে পেঁয়াজ ঘরে তোলা সম্ভব। কিন্তু ভোলায় যে জাতের আমনের আবাদ হয়, সেটির ফলন পেতে ১৩০-১৫০ দিন সময় লাগে। বাজারে এই ধানের নতুন একটি জাত এসেছে, যার ফলন পাওয়া যায় ১০০ দিনে। এ জাতে কৃষকদের অভ্যস্ত করতে পারলে পেঁয়াজের জমি দ্রুত তৈরি করা সম্ভব।