রপ্তানি বন্ধ করায় বিপাকে ভারতের ব্যবসায়ীরাও

প্রতীকী ছবি

গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন ভারতের ব্যবসায়ীরাও। পশ্চিমবঙ্গের ভারত-বাংলাদেশের ৪টি স্থলসীমান্তে পেঁয়াজ বোঝাই প্রায় এক হাজার ট্রাক আটকা পড়েছে। এ অবস্থায় ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিকারকেরা অবিলম্বে এই পচনশীল পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানির দাবি জানিয়েছেন । তারা বলছেন, ঋণপত্র খোলা এই সব পেঁয়াজের ট্রাক অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঠানোর অনুমতি দিক ভারত সরকার।

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বেনাপোল-পেট্রাপোল, ঘোজাডাঙ্গা, মালদহের মহদিপুর এবং দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে এসব পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকে আছে। ইতিমধ্যে ওই সব ট্রাকের পেঁয়াজ নষ্ট হতে শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ চুরিও হচ্ছে—এমন অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে মহদিপুর সীমান্তে ৩০০টি, ঘোজাডাঙ্গ সীমান্তে ১৫০টি এবং বেনাপোল-পেট্রাপোল ও হিলি সীমান্তে ৫০০টি পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। এতে পেঁয়াজ রয়েছে ১৬ হাজার মেট্রিক টন । এই আটকে থাকার কারণে, এ দেশে পেঁয়াজ রপ্তানিকারকেরা প্রচণ্ড আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

বিশেষ করে সীমান্তে ট্রাক আটকে থাকায় তাঁরা প্রতিদিন ক্ষতির মুখে পড়ছে। অন্যদিকে ট্রাকের ড্রাইভার ও খালাসিকে খাওয়া খরচ দিতে হচ্ছে। তাই রপ্তানিকারকেরা চাইছেন অবিলম্বে সীমান্তে আসা পণ্যবাহী পেঁয়াজের ট্রাককে বাংলাদেশে প্রেরণ করে পেঁয়াজ খালাস করার অনুমতি দেওয়া হোক। নেপাল ও ভুটান সীমান্তেও সে দেশে যাওয়ার জন্য আটকে পড়েছে অন্তত ২০০ পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক। এসব পেঁয়াজ এসেছে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে।

নাসিক ছাড়া ভারতের পাঞ্জাব, কর্ণাটক, অন্ধ্র প্রদেশ , মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, তামিলনাড়ু-তেও প্রচুর উৎপাদন হয়। তবে বাংলাদেশে রপ্তানিমুখী এসব ট্রাকের পেঁয়াজ মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মালবাহী ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনি ও কলকাতার চিৎপুর রেল ইয়ার্ডে আসে। সেখান থেকে ট্রাকে করে পাঠানো হয় বাংলাদেশে।

মহদিপুর এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা সমীর ঘোষ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, সরকার ইচ্ছে করলে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করতেই পারেন।

কিন্তু রপ্তানি বন্ধের আগে নোটিশ দেওয়া হলে এভাবে ট্রাকগুলি পেঁয়াজ নিয়ে সীমান্তে এসে আটকা পড়ত না। এতে করে ট্রাকে থাকা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। বলেন, আগাম খবর জানতে পারলে কোনো রপ্তানিকারকই পেঁয়াজ এভাবে লোড করে সীমান্তে পাঠাতেন না। তিনি সরকারকে অনুরোধ করেছেন, অন্তত যেসব ট্রাক সীমান্তে এসেছে তাদের পেঁয়াজ খালাস করার জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি তিনি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করারও আবেদন জানিয়েছেন।

ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘দেশের বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে রপ্তানিতে রাশ টানার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে যেভাবে আচমকা নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তাতে বহুমুখী সংকট তৈরি হয়েছে। লোকসানের সঙ্গে বিদেশি আমদানিকারকদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি খেলাপের মতো ঘটনা ঘটেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রপ্তানির জন্য পাঠানো পেঁয়াজ আবার দেশের বাজারে ফেরত আনাও বৈদেশিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি পেরিয়ে সম্ভব নয়। তাই ১৪ সেপ্টেম্বর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে বিভিন্ন ব্যাংকে যাদের এলসি খোলা হয়ে গেছে এবং যেসব পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক সীমান্তে পৌঁছে গেছে অন্তত তাঁদের ওই পেঁয়াজ রপ্তানি করার সুযোগ দেওয়া হোক।’