রিংশাইনের আগের পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিংশাইন টেক্সটাইলের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের মাধ্যমে ঢাকা ইপিজেডের কোম্পানিটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। পাশাপাশি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার শীর্ষ তিন পদে নতুন লোক নিয়োগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

বিএসইসির পক্ষ থেকে নতুন করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে অবসরোত্তর ছুটিতে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন।

২০১৯ সালে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি শেয়ারবাজারের মাধ্যমে দেড় শ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল। তালিকাভুক্তির দুই বছর না যেতেই কোম্পানিটির কারখানা বন্ধ বা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এমনকি কোম্পানিটির বিদেশি মালিকদের বেশির ভাগই দেশ ছেড়ে যান। পরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) মধ্যস্থতায় কোম্পানির একজন পরিচালক দেশে এলেও তিনি কোম্পানিটির সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হন। যার কারণে শেষ পর্যন্ত গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানি লে-অফ ঘোষণা করা হয়।

এ অবস্থায় কোম্পানিটিকে উৎপাদন ও রপ্তানিতে ফেরাতে আগের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গতকাল নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বিএসইসি। মেজবাহ উদ্দিনকে চেয়ারম্যান করা ছাড়া আরও যে ছয়জনকে এ কোম্পানির পরিচালক করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ,অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্সের শিক্ষক সগীর হোসেন খোন্দকার, জনতা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরজ আলী, পাওয়ার গ্রিডের স্বতন্ত্র পরিচালক ইশতাক আহমেদ শিমুল ও ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবদুর রাজ্জাক।

নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদকে চারটি সুনির্দিষ্ট দায়িত্বও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে রিংশাইনের বর্তমান প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের প্রধানকে সরিয়ে এ তিন শীর্ষ পদে নতুন লোক নিয়োগ করা। দ্বিতীয়ত করপোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের ভিত্তিতে কোম্পানির বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন, তৃতীয়ত কোম্পানিটির বন্ধ কারখানা চালু ও রপ্তানি শুরুর বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ ও সবশেষে সিকিউরিটিজ আইনের পরিপালন নিশ্চিত করা। মোদ্দাকথা, নতুন গঠিত পর্ষদ বন্ধ কোম্পানিটিকে আবারও সচল করার উদ্যোগ নেবে।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে কোম্পানিটির বিদেশি মালিকদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনার জেরে বিএসইসির অনুরোধে কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক হিসাবে আটকে যায় কোম্পানিটির আইপিওর টাকার একটি বড় অংশ।

বেপজাসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অর্থসংকটে হিমশিম খাওয়া এ কোম্পানির উদ্যোক্তারা কোম্পানিটি বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছিলেন এক বছর ধরে। কিন্তু দেনার ভারে জর্জরিত এ কোম্পানি কেনার মতো আগ্রহী কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

কোম্পানিটি গত জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের নগদ ও বোনাস মিলিয়ে ২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এ জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করার কথা থাকলেও কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত এজিএম করতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঘোষিত লভ্যাংশও বিতরণ হয়নি। শেয়ারবাজারের কোম্পানির ক্ষেত্রে এজিএমে অনুমোদনের পরই ঘোষিত লভ্যাংশ বিতরণ করা হয়।

এদিকে তালিকাভুক্তির আগে থেকেই কোম্পানিটিকে নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। এটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর জন্য প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ডিএসইর পক্ষ থেকেও বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। তা সত্ত্বেও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন এটির আইপিও অনুমোদন করে। যার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানিটি পরিচালনায় নতুন পর্ষদ গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

১০০ কোটি ডলারের বন্ড ছাড়বে আইসিবি

শেয়ারবাজারে তারল্যের জোগান বাড়াতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়বে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। এ বন্ডে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক। গতকাল বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ-সংক্রান্ত এক সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আইসিবিকে শক্তিশালী করা ও বাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে এ বন্ড ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৩ শতাংশ কুপণ রেটে আইসিবি এ বন্ড ইস্যু করবে। যে অর্থ পাওয়া যাবে তার মধ্যে ৩ হাজার কোটি টাকায় আইসিবি উচ্চ সুদে নেওয়া ঋণ শোধ করবে। ৪ হাজার কোটি টাকা স্বল্প সুদে দেওয়া হবে শেয়ারবাজারে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাকি টাকা আইসিবি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে কাজে লাগাবে।