সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন অতিদরিদ্ররা

অতিদরিদ্রদের জন্য সরকারের যে কর্মসংস্থান কর্মসূচি রয়েছে, তার টাকাও এখন মাঠপর্যায়ে যাচ্ছে না। করোনার এ সময়ে সংকটে রয়েছেন এসব মানুষ।
সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন অতিদরিদ্ররা।

প্রতীকী ছবি

সরকারি ভাতা পান এমন অতিদরিদ্ররা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। আবার করোনার কারণে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির তহবিলও মাঠপর্যায়ে যাচ্ছে না। ফলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন অতিদরিদ্র মানুষেরা। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় বিশেষ হিসাবের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে এ চিত্র উঠে এসেছে।
অতিদরিদ্র বলতে বোঝায়, যে ব্যক্তি দৈনিক ১ হাজার ৮০৫ ক্যালরি খাদ্য কেনার অর্থ সংস্থান করতে পারেন না। বর্তমান বাজারদরে এ পরিমাণ ক্যালরির খাবার কিনতে যত টাকা খরচ হয়, সেই টাকা যদি কেউ আয় করতে না পারেন, তাহলে তাঁকে অতিদরিদ্র হিসেবে ধরা হয়।

এদিকে ব্যাংকে অতিদরিদ্রের সঞ্চয় কমলেও কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, পোশাকশ্রমিক, সরকারি ভাতাভোগীদের টাকা আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে অতিদরিদ্রদের ব্যাংক হিসাবে ৩৬৫ কোটি টাকা জমা ছিল। গত মার্চে যা কমে হয় ৩২২ কোটি টাকা। আর গত জুনে তা আরও কমে নেমে আসে ২৪৬ কোটি টাকায়। সঞ্চয় কমলেও অতিদরিদ্রদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ বেড়েছে। গত মার্চে অতিদরিদ্রদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৪ হাজার ৪০৯। জুনে শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৫টিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা শুরুর পর অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (৪০ দিনের) বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যাংক হিসাবে নতুন করে কোনো টাকা জমা হয়নি। যাঁদের টাকা জমা ছিল, বরং তাঁরা টাকা তুলে নিয়েছেন।
যোগাযোগ করা হলে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মন প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে অতিদরিদ্রদের ভাতার কোনো টাকা আসেনি। ভাতার জন্য অনেকে যোগাযোগ করেন, আমরাও কিছু বলতে পারছি না।’

এদিকে করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোতে কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা ও ভাতাভোগীদের হিসাব খোলার পরিমাণ বাড়ছে। গত মার্চে কৃষকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৯ আর এসব হিসাবে জমা ছিল ৩৫১ কোটি টাকা। জুন শেষে ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩, আর এসব হিসাবে জমা অর্থ বেড়ে হয়েছে ৩৬৪ কোটি টাকা। গত মার্চে ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৯টি, জুনে তা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৯৭টি। এসব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ৩৬৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর হিসাব গত মার্চে ছিল ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫২, জুন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ লাখ ৫৮ হাজার ২৪৩টিতে। এসব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ৮৬৬ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৮৬ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনার
মধ্যেও হিসাব খোলা ও টাকা জমার পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংক হিসাবের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি ভালো করছে।

শিক্ষার্থীদের হিসাব ও জমা অর্থ বেড়েছে

এদিকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব খোলার পরিমাণ বাড়ছে। এসব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৯০২টি, মার্চে তা বেড়ে হয়েছে ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৩১। এই সময়ে জমা অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৬২৫ কোটি থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ব্যাংক হিসাব খুলেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটিতে ৫ লাখ ১৮ হাজার ৩৬৩ জন শিক্ষার্থী হিসাব খুলেছে, যাতে জমা রয়েছে ৫১৩ কোটি টাকা। এরপরই ইস্টার্ণ ব্যাংকে জমা ১৪২ কোটি টাকা ও ইসলামী ব্যাংকের ১০৭ কোটি টাকা।