সেই অশোক কেজরিওয়ালের কোম্পানি তালিকাচ্যুত হচ্ছে

  • ওটিসিতে থাকা দোয়েল গ্রুপের চার কোম্পানি এবং দুটি ডিবেঞ্চার তালিকাচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু। বিনিয়োগকারীরা ফেরত পাবেন কিছু অর্থ।

  • জানা গেছে, দোয়েল গ্রুপ হুন্ডি ব্যবসা ও ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য একসময় ব্যাংক খাতের আলোচিত ব্যবসায়ী অশোক কেজরিওয়ালের মালিকানাধীন।

  • বিএসইসি বলছে, তালিকাচ্যুতির অংশ হিসেবে আজ থেকে চার কোম্পানি ও দুই ডিবেঞ্চারের লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।

শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হতে যাচ্ছে দোয়েল গ্রুপের চার কোম্পানি ও দুটি ডিবেঞ্চার। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্তে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানি চারটি ও দুটি ডিবেঞ্চার তালিকাচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত বিএসইসির কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

দোয়েল গ্রুপের যে চারটি কোম্পানি তালিকাচ্যুত করা হচ্ছে সেগুলো হলো বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ ডায়িং অ্যান্ড ফিনিশিং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ লাগেজ ইন্ডাস্ট্রিজ বা বিডি লাগেজ এবং বাংলাদেশ জিপার ইন্ডাস্ট্রিজ বা বিডি জিপার। আর ডিবেঞ্চার দুটি হচ্ছে বিডি জিপার ১৪% ও বিডি লাগেজ ১৪% ডিবেঞ্চার। এর মধ্যে কোম্পানি চারটি বর্তমানে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি বাজারে তালিকাভুক্ত নামসর্বস্ব কোম্পানি। বছরের পর বছর এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। আর উচ্চ সুদের আশ্বাস দিয়ে ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা নিলেও পরে ডিবেঞ্চারের বিপরীতে সুদ দেয়নি দোয়েল গ্রুপ। এতে দুটি ডিবেঞ্চার ছেড়ে নব্বইয়ের দশকে প্রায় ২০ কোটি টাকা তুলেছিল গ্রুপটি। কিন্তু পরে নিয়মিত সুদ না দেওয়ায় দুটি ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগকারীদের ৮-৯ কোটি টাকা আটকে যায়।

শেয়ারবাজার ও ব্যাংক খাতের পুরোনো লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দোয়েল গ্রুপ হুন্ডি ব্যবসা ও ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য একসময় ব্যাংক খাতের আলোচিত ব্যবসায়ী অশোক কেজরিওয়ালের মালিকানাধীন। ১৯৯২ থেকে ’৯৫ সাল পর্যন্ত শেয়ারবাজারেও আলোচিত এক নাম ছিল দোয়েল গ্রুপ। ওই গ্রুপের চারটি কোম্পানি ও দুটি ডিবেঞ্চারের মাধ্যমে এ সময়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। একাধিক ব্যাংকার জানান, অশোক কেজরিওয়াল ও তাঁর মালিকানাধীন দোয়েল গ্রুপ, গিরিধারী লাল মোদী ও তাঁর প্রতিষ্ঠান এবং ওম প্রকাশ আগারওয়ালের বেআইনি বৈদেশিক লেনদেন ও ঋণ অনিয়মে সহায়তার জন্য ২০০৩ সালে তিন ব্যাংকের তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। হুন্ডি ব্যবসার জন্য এ তিন ব্যবসায়ী ও তাঁদের প্রতিষ্ঠান ছিল ব্যাংক খাতে আলোচিত নাম।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সংস্থাটির হাতে যে তথ্য রয়েছে, তাতে বিডি লাগেজ ডিবেঞ্চারে প্রায় ৮ কোটি টাকা এবং বিডি জিপারের ডিবেঞ্চারে প্রায় ১ কোটি টাকা অনাদায়ি পাওনা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত চার কোম্পানির মধ্যে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ৫৭ শতাংশ, বাংলাদেশ ডায়িং অ্যান্ড ফিনিশিংয়ের ৬০ শতাংশ, বিডি লাগেজের ৫০ শতাংশ ও বিডি জিপারের ৬৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে শেয়ারবাজারের প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।

প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা এ চার কোম্পানির শেয়ারের একটি বড় অংশই রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) হাতে। সেই হিসাবে চার কোম্পানির তালিকাচ্যুতি প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আইসিবি।

বিএসইসি বলছে, তালিকাচ্যুতির অংশ হিসেবে আজ থেকে চার কোম্পানি ও দুই ডিবেঞ্চারের লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে সম্মিলিতভাবে এস্ক্রু হিসাব (যে হিসাবে নিয়ন্ত্রকের অনুমোদন ছাড়া লেনদেন করা যায় না) খুলে ডিবেঞ্চার ও কোম্পানির শেয়ারধারীদের দাবি ও অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। তবে বিনিয়োগকারীরা কত টাকা করে ফেরত পাবেন, তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।