সোনার দাম নিয়ে যা হচ্ছে

ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণের চিন্তা চলছে। সেটি হলে প্রতি ভরির দাম ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও কারিগরদের মজুরিকে সোনার অলংকারের দামের সঙ্গে একীভূত করার চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সেটি হলে ২২ ক্যারেট বা ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বর্তমানে সোনার অলংকারের দামের সঙ্গে আলাদাভাবে ভ্যাট ও মজুরি আদায় করা হয়। সোনার অলংকারের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারিত রয়েছে। আজ বুধবার নতুন দর কার্যকর হওয়ায় ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেট সোনার ভরি ৭৪ হাজার ৬৫০ টাকা দাঁড়িয়েছে। এই দামের সঙ্গে আলাদাভাবে ৫ শতাংশ ভ্যাট ও মজুরি যোগ হয়।

ভ্যাট ও মজুরি যুক্ত করে সোনার দাম নির্ধারণের নতুন পদ্ধতিটি চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রভাবশালী স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একটি অংশের বিরোধিতায় পুরো বিষয়টি থমকে গেছে। উল্টো এখন ভ্যাট হার কমানোর দাবি তোলার পরিকল্পনা করেছেন সমিতির নেতারা। দাবিটি আদায় হলেই ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণের পথে হাঁটবেন তাঁরা।

সমিতির নেতারা জানান, ক্রেতাদের একটি অংশ সোনার অলংকার কেনার সময় ভ্যাট দিতে চান না। আবার ভ্যাট পরিশোধে ব্যবসায়ীরাও দুর্নীতির আশ্রয় নেন। অন্যদিকে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলার্সে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) মেশিন বসিয়েছে। এ কারণে ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার অলংকারের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করে বাজুস।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশের বুলিয়ন মার্কেটের দাম পর্যালোচনা করে সোনার দাম নির্ধারণ করে জুয়েলার্স সমিতি। তবে বৈধভাবে সোনা আমদানি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশে সোনার দাম ভরিতে সব সময়ই চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক উত্থান-পতন থাকায় গত বছর ১৪ বার সোনার দাম সংশোধন করেছে সমিতি। তাতে পুরো বছরে ভরিপ্রতি সোনার দাম বেড়েছে ১২ হাজার ৩০৫ টাকা।

জানতে চাইলে জুয়েলার্স সমিতির সহসভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই। ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার অলংকারের দাম নির্ধারণ করা হলে সব ক্রেতাই সেটি দিতে বাধ্য থাকবেন। তখন ভ্যাট দেন না বলে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের ওপর দায় চাপাতে পারবেন না। সরকারের রাজস্বও বাড়বে। তার আগে অবশ্যই ভ্যাটের হার কমাতে হবে।’

গত মাসে সমিতির একটি কমিটি কাজ করে পুরো সোনার অলংকারের নতুন দাম কীভাবে নির্ধারিত হবে, তার একটি পদ্ধতি দাঁড় করায়। সেই কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে প্রতি গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনার দাম ৬ হাজার ৪০০ টাকা। তার সঙ্গে ২৫০ টাকা মজুরি যোগ হবে। মজুরিসহ প্রতি গ্রাম সোনার দাম হয় ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। তার ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট ধরলে প্রতি গ্রামের দাম হবে ৬ হাজার ৯৮২ টাকা। এমনটি হলে এক ভরির সোনার অলংকারের দাম হবে ৮১ হাজার ৪৪৩ টাকা।

কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাট, মজুরিসহ সোনার দাম নির্ধারণ করা হলে তাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, তখন সোনার দাম প্রতি ভরি ৮০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। আবার ঢাকার বাইরের বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ভ্যাট দেন না। ঢাকার বড় মার্কেটের জুয়েলার্সগুলো ভ্যাট দিচ্ছে। নতুন প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করা হলে তা অনেক ব্যবসায়ী না-ও মানতে পারেন। সেটি হলে একধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে সমিতির ৯ সদস্যের কোর কমিটির বৈঠকে আবারও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি এনামুল হক খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্যাট হার না কমিয়ে নতুন পদ্ধতিতে গেলে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে সোনার দাম অনেক বেশি হয়ে যাবে। তেমনটি হলে দেশের জুয়েলার্স ব্যবসা ধ্বংস হয়ে যাবে। ভারতে সোনার অলংকারে ভ্যাট হার ৩ শতাংশ। পর্যটকদের জন্য সেটি আবার শূন্য। তাই আমরা ভ্যাট হার ২ শতাংশ করার কথা বলছি। ভ্যাট কমানো হলে ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে নতুন পদ্ধতিতে যাব আমরা। তাতে সরকার আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব পাবে।’

স্বর্ণ নীতিমালা ২০১৮-এর তথ্যানুযায়ী, দেশে বছরে ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার কেজি সোনার চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে ১০ শতাংশ পুরোনো সোনার অলংকার গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। বাকি ৯০ শতাংশ সোনা ব্যাগেজ রুলসের মাধ্যমে আসে। অন্যদিকে সারা দেশে কত জুয়েলার্স আছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ঢাকায় জুয়েলার্স সমিতির সদস্য ৭৫০। সারা দেশে ১৪ হাজারের বেশি জুয়েলার্স দোকান রয়েছে বলে দাবি সমিতির নেতাদের।