শেয়ারবাজারে ৩২% লেনদেনই বেক্সিমকো গ্রুপের

ঢাকার বাজারের গতকালের লেনদেনের এক–তৃতীয়াংশ ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানির দখলে।

  • গত তিন মাসে বেক্সিমকো লিমিটেডের দাম ৬৯ টাকা বা ৩৩৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৯ টাকা।

  • বেক্সিমকো ফার্মার দাম তিন মাসে ৮২ টাকা বা ৬৯ শতাংশ বেড়েছে।

  • শাইনপুকুর সিরামিকসের দাম তিন মাসে বেড়েছে সাড়ে ১৩ টাকা বা ৮৩ শতাংশ।

দেশের শেয়ারবাজারে চলছে বেক্সিমকোর দাপট। লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার করছে এ গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। গতকাল সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনের ৩২ শতাংশই ছিল এ গ্রুপের তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির। কোম্পানিগুলো হলো বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকস। গতকাল ডিএসইতে এই তিন কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫০০ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ৩২ শতাংশ।

বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানির মধ্যে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। ডিএসইতে গতকাল এককভাবে কোম্পানিটির প্রায় ৩৩১ কোটি টাকার শেয়ারের লেনদেন হয়, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ২১ শতাংশ। বেক্সিমকো লিমিটেডের গতকালের লেনদেন একক কোনো কোম্পানির এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে টেলিযোগাযোগ খাতের নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবি আজিয়াটার এক দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল।

বেক্সিমকোর গতকালের সর্বোচ্চ লেনদেনের পেছনে মূল কারণ ছিল কোম্পানিটির অবিশ্বাস্য মুনাফার খবর। এ মুনাফা ও আয়ের খবর নিয়ে গত রোববার রাত থেকে শেয়ারবাজারে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়। আলোচনার এ খোরাক তৈরি হয়েছে কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন ঘিরে। গতকাল কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্ধবার্ষিক ও অক্টোবর–ডিসেম্বর সময়ের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, করোনাকালেও কোম্পানিটির আয় অবিশ্বাস্যভাবে বেড়েছে। তাতে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসেও বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটেছে।

ডিএসইতে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের কর–পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১৬৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ করোনাকালে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ১২০ কোটি টাকা বা প্রায় ২৫০ শতাংশ। ২০১৯ সালে জুলাই–ডিসেম্বর সময়কালে বেক্সিমকোর ইপিএস যেখানে ছিল মাত্র ৫৪ পয়সা, সেটি ২০২০ সালের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ১ টাকা ৯২ পয়সা। আয়ের এ বড় ধরনের উল্লম্ফনের কারণে শেয়ারটির মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও অনেক কমে গেছে।

কোম্পানির আয়ের বড় উল্লম্ফনের পরও গতকাল দিন শেষে বেক্সিমকোর শেয়ারের দামের বড় ধরনের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম মাত্র ২০ পয়সা বেড়েছে। যদিও এর আগে বড় ধরনের কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই মাত্র তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৯ টাকা বা ৩৩৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৯ টাকা। তিন মাস আগেও এ শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ২০ টাকা। এ ছাড়া এই গ্রুপের অপর প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার দাম তিন মাসে ৮২ টাকা বা ৬৯ শতাংশ ও শাইনপুকুর সিরামিকসের দাম সাড়ে ১৩ টাকা বা ৮৩ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই বেক্সিমকো গ্রুপের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ গ্রুপের কোম্পানিগুলোকে ঘিরে নানা তথ্য বেশ কিছুদিন ধরেই বাজারে বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাতে শেয়ারের দামও হু হু করে বাড়ছিল। পরে মুখে মুখে ঘুরে ফেরা সেসব তথ্য বাস্তবে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ হয়। যেমন বেক্সিমকো ফার্মা সানোফিকে অধিগ্রহণ করতে যাচ্ছে ১৫–২০ দিন ধরেই শেয়ারবাজারে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি আনুষ্ঠানিকভাবে এ–সংক্রান্ত চুক্তি করে। আবার বেক্সিমকোর লিমিটেডের আয় অনেক বাড়বে, এমন খবরও কিছুদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল বাজারে। গতকাল জানা গেল, কোম্পানিটির গত ছয় মাসে অবিশ্বাস্য রকমের আয় বেড়েছে।

তবে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, বেক্সিমকো লিমিটেড যদি রপ্তানি আদেশের সব চাহিদা পূরণ করতে পারত, তাহলে আয় আরও অনেক বেড়ে যেত। কিন্তু উৎপাদন সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ গতানুগতিক যেসব পণ্য রপ্তানি করে, তার তুলনায় পিপিই রপ্তানিতে মুনাফার হার অনেক বেশি। এ কারণে বৈশ্বিক পিপিই বাজারে বেক্সিমকো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে চায়।

এদিকে বেক্সিমকো গ্রুপের দাপটের দিনে গতকাল লেনদেন বাড়লেও কমেছে সূচক। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ২৬ পয়েন্ট কমেছে। আর লেনদেন আগের দিনের চেয়ে ১২৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকায়।