৮ দিনে শেয়ারের দাম বেড়ে চার গুণ

লেনদেন শুরুর পর থেকেই একটানা সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ইজেনারেশনের। তাতে মাত্র আট কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে প্রায় চার গুণ। এ মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার বিক্রি হয়েছিল ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে। সেই ১০ টাকা শেয়ারবাজারে এসে ৮ দিনে ২৯৪ শতাংশ বেড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায়। প্রতিদিনই কোম্পানিটির শেয়ারের দিনের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। ১০ টাকার শেয়ার ৮ দিনে ৪০ টাকা হয়ে গেলেও কোম্পানিটির বোনাস বা স্টক লভ্যাংশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এদিকে, গত ২ ফেব্রুয়ারি তালিকাভুক্ত কোম্পানি মীর আকতার হোসেনের শেয়ারের ক্ষেত্রে বিএসইসির বেশ তৎপরতা দেখা যায়। এই কোম্পানির লেনদেন শুরুর দ্বিতীয় কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দামে ক্রয়াদেশ দিয়ে শেয়ারের দাম প্রভাবিত করায় দুটি বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সাময়িকভাবে জব্দ করা হয়েছিল। পাশাপাশি একজন ট্রেডারকে (অনুমোদিত প্রতিনিধি) সাময়িকভাবে লেনদেন থেকে বিরত করা হয়েছিল। এ ঘটনার তদন্তে গঠন করা হয়েছিল তদন্ত কমিটি।

কিন্তু একটানা আট দিন ধরে ইজেনারেশনের শেয়ার নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলেও বিএসইসির দিক থেকে কোনো পদক্ষেপই এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এ কারণে আইপিও শেয়ারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, যেভাবে মীর আকতারের দাম বেড়েছিল, ইজেনারেশনের শেয়ারের দামও সেভাবেই বাড়ছে। অথচ একটির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হলো, অন্যটির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা চুপ।

বোনাসে চার বছরের নিষেধাজ্ঞা

আগামী চার বছর কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো স্টক বা বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিটির আইপিও বিবরণী বা প্রসপেক্টাস পর্যালোচনা করে এ শর্তের বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় কোম্পানিটির বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণায় কয়েক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের শুধু নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে।

জানা গেছে, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন অনেক গুণ বাড়ানো হয়েছে। সেই তুলনায় মুনাফা বা ব্যবসা খুব বেশি বাড়েনি। এ অবস্থায় পরিশোধিত মূলধন আরও বাড়ানো হলে তাতে কোম্পানিটির লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাবে। এ কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানিটির বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণার ওপর চার বছরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

আইপিও প্রসপেক্টাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জুনে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৪২ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুনে তা বেড়ে হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৬০ কোটি টাকা। আইপিওর ১৫ কোটি টাকা যুক্ত হওয়ার পর তা বেড়ে ৭৫ কোটি টাকা হয়েছে।

শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ও বোনাসে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে ইজেনারেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইপিও অনুমোদনের সময়ই বোনাস শেয়ারে চার বছরের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা মনে করি, বিএসইসির ওই সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য ভালো। আর বাজারে শেয়ারের দাম নিয়ে নয়, আমাদের মনোযোগ ব্যবসা ও কোম্পানি পরিচালনায়।’