৮ দেশ থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিলেন ব্যবসায়ীরা

  • ভারতের বিকল্প আটটি দেশ থেকে প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শীর্ষদেশ নেদারল্যান্ডস, মিসর, পাকিস্তান, চীন।

  • আমদানিতে কম সময় ও দামের সুবিধায় বাংলাদেশে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের ৯৯ শতাংশ আসত ভারত থেকে।

  • গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধের পর প্রথমবার বড় আকারে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়।

  • গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মোট পেঁয়াজ আমদানির ৪০ শতাংশ বা ২ লাখ ১৬ হাজার টন এসেছে বিকল্প বাজার থেকে।

প্রতীকী ছবি

পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য চীন, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, মিসর ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোর রপ্তানিকারকদের চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে। ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বাংলাদেশে পেঁয়াজ সরবরাহ করতে মরিয়া এসব দেশের রপ্তানিকারকেরা।

বাংলাদেশের আমদানিকারকেরাও এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ কেনার চুক্তি করছেন।
ভারতের বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে। ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পর থেকেই ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন। গত সোমবার পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন সংস্থা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক কৃষিবিদ মো. আজহার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর প্রতিদিন বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহের ক্ষেত্রে রেকর্ড হচ্ছে। এসব পেঁয়াজ দেশে এলে কোনো সংকট থাকবে না।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যে দেখা যায়, গত রোববার পর্যন্ত আটটি দেশের বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে রয়েছে নেদারল্যান্ডস, মিসর, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও চীন শীর্ষে রয়েছে। পাঁচটি দেশ থেকেই ৯২ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুলেছেন চট্টগ্রামের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ট্রেড ইমপ্যাক্সের কর্ণধার ফারুক আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি বেড়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় এসব দেশও বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

পেঁয়াজ আমদানিতে বিকল্প দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকায় প্রতিযোগিতামূলক দামও পাচ্ছেন বাংলাদেশের আমদানিকারকেরা। ভারতের রপ্তানি বন্ধের পরপরই বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের ক্রয়াদেশের চাপে পেঁয়াজের দাম টনপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ ডলার বাড়িয়ে দেয় তারা। তাতে ৩৮০ ডলারের পেঁয়াজের দাম উঠে সর্বোচ্চ ৫০০ ডলারে। এখন বিকল্প দেশের সংখ্যা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২০-৩০ ডলার করে কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

বিকল্প বাজার বড় হচ্ছে
আমদানিতে কম সময় ও দামের সুবিধায় বাংলাদেশে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের ৯৯ শতাংশ আসত ভারত থেকে। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধের পর প্রথমবার বড় আকারে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে দেশের মোট পেঁয়াজ আমদানির ৪০ শতাংশ বা ২ লাখ ১৬ হাজার টন এসেছে বিকল্প বাজার থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিকল্প বাজার থেকে এর আগে কখনোই এত বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়নি।

পেঁয়াজ আমদানির বিকল্প বাজারের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার। মিয়ানমার ছাড়াও চীন, মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এবার এই তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড ও মালয়েশিয়া।

চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর শুরুতে আমদানির অনুমতি সংগ্রহে বিকল্প দেশ ছিল চারটি। এখন তা বেড়ে আটটিতে উন্নীত হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুই বছর ধরে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় বিকল্প বাজারই বড় ভরসা।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

ঘাটতি থাকছেই
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি হারে বাড়ছে। এতে প্রতিবছর আমদানিও বাড়ছে। পেঁয়াজ আমদানিতে রেকর্ড হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। সে বছর ১১ লাখ ৩৬ হাজার টন আমদানি হয়। কৃষি বিভাগের হিসাবে, উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন, পরিবহনজনিত ক্ষতি বাদ দিয়ে যার ২৫ শতাংশ বাজারজাত হয়েছিল।
গত পাঁচ বছরের উৎপাদন ও আমদানির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী বছরে এখনো ১০-১১ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই ঘাটতি পূরণে আমদানির বিকল্প নেই।

জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুই বছর ধরে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় বিকল্প বাজারই বড় ভরসা। গত বছর থেকে পেঁয়াজ আমদানির উৎস দেশের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগের চেয়ে কম সময় ও প্রতিযোগিতামূলক দামে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।