স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে বাংলাদেশের চেয়ে সুবিধা কম

বেশ কয়েকটি স্থলবন্দরের ভারতীয় অংশে ওজন স্কেল, পণ্যাগার, শেড, পার্কিং ইয়ার্ড ও অফিস ভবন নেই, যা বাংলাদেশ অংশে আছে।

স্থলবন্দর
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

যেসব স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়, সেগুলোর বাংলাদেশ অংশের অবকাঠামো–সুবিধা ভালো থাকলেও ভারতীয় অংশের অবস্থা ভালো নয়। এতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, কৃষি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিষয়টি জানিয়েছে। তারা এ–ও বলেছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা আছে, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট–সংলগ্ন ১৫০ গজের মধ্যে উভয় দেশই উন্নয়নকাজ করবে।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী গতকাল শনিবার মুঠোফোনে বলেন, ‘উভয় পক্ষের অবকাঠামো উন্নয়নই একসময় সমান হবে। তার আগে বারবার আলোচনা করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অধিকতর উন্নয়নে আমরা কাজ করব।’

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, সোনামসজিদ, ভোমরা, বুড়িমারী, গোবরাকুড়া-কড়ইতলী ও হিলি স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশে প্রয়োজনীয় বন্দরসুবিধা আছে। সুবিধাগুলো হচ্ছে—ওজন স্কেল, পণ্যাগার, শেড, পার্কিং ইয়ার্ড ও অফিস ভবন। অথচ বাংলাদেশ অংশের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা, চ্যাংড়াবান্ধা, গাছুয়াপাড়া, মহাদিপুর ও হিলি স্থলবন্দরে এসব সুবিধা নেই।

শুধু তা–ই নয়, অধিকাংশ স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশে পণ্য পরীক্ষা করার কোয়ারেন্টিন কার্যালয় আছে; কিন্তু ভারতীয় অংশের ঘোজাডাঙ্গা, চ্যাংড়াবান্ধা, গাছুয়াপাড়া, হিলি, মহাদিপুর ও শ্রীমন্তপুরে এই সুবিধা নেই। ফলে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় বাড়ছে বলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরে বিদেশি রোগবালাইয়ের অনুপ্রবেশ ও বিস্তার রোধে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র বা চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়ে থাকে। রোগবালাই শনাক্তকরণের পর মিনি ল্যাব বা গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। কোনো নাগরিক উদ্ভিদ বা বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আনলে তা পরীক্ষা করে সনদ দেওয়া হয়।

যৌথ কার্যদলের আলোচনা চলছে

দর্শনা-গেদে, বিরল-রাধিকাপুর ও চিলাহাটি-হলদিবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে রেলপথে বাণিজ্য চালু আছে। কিন্তু গেদে ছাড়া বাকি দুই শুল্ক স্টেশনে স্থলপথ চালু নেই। এলসি স্টেশনের অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের একটি যৌথ কার্যদল রয়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিতে গত ২২-২৩ আগস্ট অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গেদে স্থলবন্দরে স্থল রুট করার ঘোষণাসহ সংযোগ সড়ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এসব কথা উল্লেখ করে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, রাধিকাপুর ও হলদিবাড়ী শুল্ক স্টেশন বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অধিকতর পর্যালোচনা করার আছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে গেদে শুল্ক স্টেশনে অবকাঠামো নির্মাণ এবং রাধিকাপুর ও হলদিবাড়ী শুল্ক স্টেশনে রেলপথের পাশাপাশি স্থল রুটের ঘোষণাসহ বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের বিষয় এজেন্ডাভুক্ত করা যায়।

শুল্ক স্টেশনের উন্নয়নে এ পর্যন্ত যৌথ কার্যদলের চারটি বৈঠক হয়েছে। প্রথম বৈঠক বাংলাদেশের ভোমরা স্থলবন্দরে, দ্বিতীয়টি ভারতের শিলিগুড়িতে, তৃতীয়টি বাংলাদেশের কুমিল্লায় আর চতুর্থটি ভারতের নয়াদিল্লিতে হয়েছে। পঞ্চম বৈঠকটি বাংলাদেশের সিলেটে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারত থেকে নিয়মিত খাদ্যপণ্য আমদানি করেন এমন একজন ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বহু বছর ধরে আলোচনার কথা শুনে আসছি। কিন্তু বন্দর উন্নয়নে ভারত সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে ধরে নেওয়া যায় যে আলোচনাগুলো কার্যকর হচ্ছে না।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। আলোচনা যেহেতু হচ্ছে, সমাধানও বেরিয়ে আসবে।’

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের ১৫টি স্থলবন্দর দিয়ে ১ কোটি ৭৪ লাখ ১০ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ কোটি ১৩ হাজার টন। এর প্রায় পুরোটাই ভারতীয় পণ্য। কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে কিছু পণ্য আমদানি হয়।

২০২২–২৩ অর্থবছরে স্থলবন্দর দিয়ে ১৩ লাখ ১ হাজার ৫৬০ টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা এর আগের বছরে ছিল ১২ লাখ ৯৩ হাজার টন।

দেশের ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে বর্তমানে ১৫টি কার্যকর। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেনাপোল, বুড়িমারী, তামাবিল, ভোমরা, সোনাহাট, আখাউড়া, সোনামসজিদ, হিলি ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর।