ভারতের দুই চাকার যানবাহন আমদানিকারী দেশগুলো হলো কলম্বিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, মেক্সিকো ও নেপাল। আর তিন চাকার যান রপ্তানিকারক শীর্ষ দেশগুলো হলো নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও মেক্সিকো। এর মধ্যে কয়েকটি দেশই অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। তার প্রভাব পরে ইন্ডিয়ার রপ্তানির ওপর। করোনার পরে নাইজেরিয়ার মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশ অতিক্রম করে। নেপাল আমদানিতে ১০ মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফলে ভারতের অটো রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের গবেষণাপ্রধান মিতুল শাহ ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব যানবাহনের বাজারেও পড়েছে। দুই ও তিন চাকার গাড়ির চাহিদা কমেছে। এ ছাড়া মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষও গাড়ি কিনছে কম।

বাজাজ অটোর নির্বাহী পরিচালক রাকেশ শর্মা বলেন, দুই ও তিন চাকার যানবাহন রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশই করে বাজাজ অটো। তারা ৯০টি দেশে গাড়ি রপ্তানি করে। তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস ও ব্যবসার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদা কমে গেছে। এই প্রতিকূল অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তিন-চার মাস সময় লাগবে।

রাকেশ শর্মা আরও বলেন, ‘এখন বাজার কিছুটা খারাপ। আমরা স্টক কিছুটা কমিয়ে এনেছি। পরিস্থিতি ভালো হলে আমরা আবার বাজার দখলে নেব।’

চেন্নাইয়ের টিভিএস মোটর কোম্পানি ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে ৭ দশমিক ৫৪ লাখ ইউনিট দুই চাকার যান রপ্তানি করে, কিন্তু তা ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ শতাংশ কম।

টিভিএস মোটর কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল নায়েক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। আমরা আশাবাদী, আগামী দিনগুলোয় স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।’

রাহুল নায়েক জানান, গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় এ বছরের জানুয়ারিতে টিভিএস মোটর কোম্পানির রপ্তানি ৪৪ শতাংশ কমে ৪৮ হাজার ২৩৯ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।

সিয়ামের সভাপতি বিনোদ আগারওয়াল বলেছেন, কিছু বিদেশি ব্যাংক অটো আমদানির জন্য ক্রেডিট লেটার খোলার জন্য ১০০ শতাংশ নগদ দেওয়ার মতো বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা ভারতের রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে।

হোন্ডা অটোমোবাইল অ্যান্ড স্কুটার ইন্ডিয়ার এমডি আতসুশি ওগাতা বলছেন, গত ছয় থেকে আট মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দেশে রপ্তানি প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমে গেছে। কোম্পানিগুলোর রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তবে লাতিন আমেরিকায় বাজার ভালো থাকায় সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যাবে হয়তো।

সিয়ামের মহাপরিচালক রাজেশ মেনন বলেছেন, এখন আফ্রিকার অনেক বড় দেশ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। যানবাহনের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যানবাহন আমদানি না করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানিতে মনোযোগ দিচ্ছে তারা।

তবে ভারতের যাত্রীবাহী গাড়ির রপ্তানি কমেনি। বস্তুত, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারতের যাত্রীবাহী গাড়ির রপ্তানি বেড়েছে ১৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাত্রীবাহী গাড়ির বাজার অনেক বড় বলে এই খাতে তেমন প্রভাব পড়েনি।