আবার সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে সরকার

আবারও সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমোদন দিতে পারে সরকার
প্রথম আলো

প্রায় এক বছর আগে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হলেও সরকার পুনরায় এ চাল রপ্তানি খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) নেতৃত্বে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ বহাল রাখা বা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মূলত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে সব সময়ই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নেওয়া হয় এ ব্যাপারে। গত বছরের ১ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়েরই অনুরোধে। এবার যখন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে, তা–ও খাদ্য মন্ত্রণালয়েরই পরামর্শে। তবে রপ্তানির ফলে দেশীয় বাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে বিটিটিসি। এবার গুরুত্ব দেওয়া হবে সেই প্রতিবেদনকেও।

বিটিটিসির নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং রপ্তানিকারকদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সুগন্ধি চাল রপ্তানির পক্ষেই মতামত উঠে আসে বলে জানা গেছে। আর বরাবরের মতো এবারও রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হতে পারে ঢালাও নয়, বরং কেস-টু কেস ভিত্তিতে।

রপ্তানির সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার আগের কয়েক বছর বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ১০ হাজার টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়ে আসছিল। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে রপ্তানির অনুমতি নিয়েছিল ৪১টি প্রতিষ্ঠান। তবে যত পরিমাণ রপ্তানির অনুমতি নেওয়া হয়েছিল, সবাই সেই পরিমাণ রপ্তানি করতে পারেনি। দেশে বছরে গড়ে সুগন্ধি চালের উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন।

রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আগাম অনুমোদন নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানির উদাহরণ রয়েছে।

২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। ওই বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।

দেশে অনেক ধরনের সুগন্ধি চাল থাকলেও রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। চালগুলো হচ্ছে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসীমালা, তুলসী আতপ, তুলসীমণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।

২০০৭-০৮ সালের আর্থিক মন্দার সময় বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। ওই সময় বাংলাদেশ থেকে সুগন্ধি চালের আড়ালে সাধারণ চালও রপ্তানি হচ্ছিল বলে সরকারের নজরে আসে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অর্থ পাচার করতে তখন এ কৌশল বেছে নিয়েছিলেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য ছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সব ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৯ সালের ১৯ মে জারি করা এক আদেশে ওই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে আওয়ামী লীগ সরকারও। তবে তখনকার নিষেধাজ্ঞার একটি নেতিবাচক প্রভাবও পড়ে। এ ফাঁকে বাংলাদেশের সুগন্ধি চাল রপ্তানির বাজার দখল করে নেয় ভারত ও পাকিস্তান। দেশ দুটির বাসমতী চাল রপ্তানির সুযোগ তখন বেড়ে যায়। আর বাংলাদেশ হারায় তার নিজের বাজার।

দেশে ঈদ, পূজা, বিয়ে, জন্মদিনসহ বিশেষ অনুষ্ঠান ও উৎসবে সুগন্ধি চালের ব্যবহার রয়েছে। তবে রপ্তানি করা সুগন্ধি চালের প্রধান ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশিরা৷ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) ব্রি ধান ৫০ নামের একটি সুগন্ধি চাল উদ্ভাবন করে। ২০০৮ সালে এ ধান কৃষকের কাছে আসে ‘বাংলামতী’ নাম নিয়ে। সুগন্ধির মধ্যে বর্তমানে এর উৎপাদনই সবচেয়ে বেশি।