গ্রামে বসেই ওঠানো যাবে ব্যাংকের টাকা, পাওয়া যাবে ঋণও

ধরা যাক, আপনি গ্রামে থাকেন। আপনার ব্যাংক হিসাবে টাকা আছে। কিন্তু ব্যাংক খোলা নেই। দিনের কাজ গুটিয়ে ফেলেছে ব্যাংক। আবার গ্রামে কোন এটিএম বুথও নেই। তখন অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েন। এই সমস্যা সমাধান নিয়ে আসছে এটুআই-এর পেমেন্ট পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম 'একপে' ও জয়তুন বিজনেস সলিউশনস। দেশের ৯০ হাজারের মতো গ্রামে তারা গড়ে তুলবে ভিলেজ ডিজিটাল বুথ। এই বুথ থেকে ব্যাংকের কার্ড বা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে টাকা জমা ও ওঠানো যাবে। ভবিষ্যতে ঋণও পাবেন হিসাবধারীরা।  

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এটুআই ও জয়তুন বিজনেস সলিউশনসের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর এবং জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই বুথ গ্রাম এলাকায় স্থাপন করা হবে। বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং, শেয়ার বাজার ও বীমা খাতসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবা পাবে সেখানকার বাসিন্দারা। সরকারি পরিষেবা বিল পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাসমূহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিল পরিশোধ, টেলিমেডিসিন, ই-টিকেটিং ইত্যাদি অনেকটা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মতো সেবা পাওয়া যাবে।

এই বুথ পরিচালিত হবে একজন উদ্যোক্তার মাধ্যমে। যিনি মূলত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে সকল লেনদেনের কাজ করবেন। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো লেনদেনের উপর নির্ভর করবে তার আয়। বুথে যে টাকা লেনদেন হবে সেই বিনিয়োগ হবে ওই উদ্যোক্তার। উদ্যোক্তার ব্যাংক হিসাবে লক্ষাধিক টাকা থাকলে তিনি কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারবেন।

ব্যাংক হিসাব তো বটেই মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমেও এসব বুথ থেকে টাকা উঠানো ও জমা দেয়া যাবে। সেবা গ্রহীতা কাগজের চেকের মাধ্যমে কোন আর্থিক সেবা পাবেন না। ব্যাংক হিসাবের বিপরীতে সেবা পেতে কোন একটা ডিজিটাল মাধ্যম যেমন-মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে। ইকেওয়াইসি প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব লেনদেন সম্পন্ন করা হবে।

এখানে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সেবা মিলবে বলে দাবি এটুআই ও জয়তুনের। ইতোমধ্যে দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। চলতি মাসের শেষ নাগাদ এই ডিজিটাল বুথ স্থাপনের পাইলটিং শুরু হবে মুন্সিগঞ্জ জেলার ৫০টি গ্রামে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে দেশের সব গ্রামে এই সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে উদ্যোক্তাদের।

অনুষ্ঠানে জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর চেয়ারম্যান মো. আরফান আলী বলেন, কাজটা শুরু করা গেলে একটা সময় ব্যাংকগুলো এই উদ্যোক্তার মাধ্যমে ঋনও দেওয়া শুরু করতে পারবে। সে লক্ষ্যে আগাচ্ছি আমরা। কারন যিনি উদ্যোক্তা হবেন, তাকে সেই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। তিনি সেখানখার স্থানীয় সুবিধা অসুবিধা জানবেন। ব্যাংকও স্থানীয়ভাবে তদারকির লোক পাবে। স্থানীয় উদ্যোক্তা হতে নূন্যতম এইচএসসি পাশ করতে হবে।

আরফান আলী আরও বলেন, উদ্যোক্তার জন্য ব্যবসাবান্ধব করে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হবে। এখানে আমাদের লক্ষ্য শুধু ব্যবসায় লাভ করা নয় একইসাথে উদ্যোক্তা তৈরি ও অর্থিক অন্তর্ভুক্তির কাজটাও আমরা করতে চাই। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল বুথ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে আর্থিক অর্ন্তভুক্তির ক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার সাথে সম্পৃক্ত করে গ্রামীণ পর্যায়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

অনুষ্ঠানে এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে। যা দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।

জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসাইন বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নতুন হলেও, উদ্যোক্তাদের এই চিন্তা আরও আগের। তবুও নতুন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে আস্থা রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলে ধন্যবাদ। আশাকরি প্রান্তিক মানুষের আর্থিক সেবার ডিজিটাল বুথ যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে উভয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।