২৩ পরিচালক পদে ভোট হবে, বাকিটা সমঝোতায়

কয়েক বছর ধরেই সমঝোতার ভিত্তিতে সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তা-ও আংশিক।

এফবিসিসিআইয়ের লোগো

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সব পদে এবারও সাধারণ সদস্যরা ভোট প্রদানের সুযোগ পাবেন না। কারণ, সব পদে নির্বাচন হবে না। তবে ২৩ পরিচালক পদে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ড গতকাল মঙ্গলবার ২০২৩-২৫ সালের জন্য ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের জন্য ১০৫ বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপি ও করখেলাপি হওয়ায় ৩৪ প্রার্থীর মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে প্রার্থিতা ফিরে পেতে তাঁরা নির্বাচন বোর্ডে আবেদন করতে পারবেন। ৩১ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এফবিসিসিআইয়ের ২৩ পরিচালক পদে ভোট হবে।

২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য সংগঠনটিতে মোট পরিচালক পদ ৮০টি। এসব পদ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে জেলাভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা চেম্বার থেকে ৪০ জন পরিচালক হন। বাকি পদ পণ্যভিত্তিক ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য সংরক্ষিত।
চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ৩৪ মনোনীত পরিচালক পদের বিপরীতে বর্তমানে বৈধ প্রার্থী আছেন ২৪ ব্যবসায়ী।

‘আমরা এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে সাধারণ সদস্যদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ, ভোটের মাধ্যমেই সঠিক নেতৃত্ব আসবে। সেটি হলেই সরকার ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।’
মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক

বাকি ১০ জনের মনোনয়ন স্থগিত আছে। অন্যদিকে সরাসরি ভোটের জন্য চেম্বার গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের বিপরীতে বৈধ প্রার্থী আছেন ২৩ জন। বাকি ছয়জনের প্রার্থিতা আপাতত স্থগিত আছে। তাঁরা যদি আপিল করেও প্রার্থিতা ফিরে না পান, তাহলে চেম্বারের গ্রুপের পরিচালক পদে ভোটের প্রয়োজন পড়বে না। বৈধ ২৩ প্রার্থী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালক হয়ে যাবেন।

আর সরাসরি ভোটের জন্য অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদের বিপরীতে বৈধ প্রার্থী আছেন ৫৮ জন। এ ছাড়া ১৮ জনের প্রার্থিতা স্থগিত রয়েছে। ফলে এই অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের পরিচালক পদে সরাসরি ভোট হবে।

এফবিসিসিআইয়ের এবারের নির্বাচনে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ নামের দুটি প্যানেল রয়েছে। ঐক্য পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি চেম্বার গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালক হচ্ছেন। অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ।

জানা যায়, ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেল থেকে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ৪৬ পদের বিপরীতে ৬৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পদের বিপরীতে ২৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মনোনয়ন স্থগিত আছে। এই প্যানেল থেকে চেম্বার গ্রুপের ২৩ পদে কোনো প্রার্থী নেই।

কয়েক বছর ধরেই সমঝোতার ভিত্তিতে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়েছে। সেখানে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরাই জায়গা করে নিচ্ছেন। সরকারদলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন ব্যবসায়ীরা হয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।

এফবিসিসিআইয়ের সর্বশেষ ভোট হয় ২০১৭ সালে, তা-ও আংশিক। ওই সময় সভাপতি হন শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। পরিচালক পদেও চেম্বার অংশে ভোট ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। তবে পণ্যভিত্তিক সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন অংশে তখন ভোট হয়েছিল। তারপর দুই মেয়াদে নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি হন যথাক্রমে শেখ ফজলে ফাহিম ও মো. জসিম উদ্দিন।

গত ২০ জুন এফবিসিসিআইয়ের পরবর্তী সভাপতি হিসেবে মো. মাহবুবুল আলমকে সমর্থন দিয়েছেন ফেডারেশনের সাবেক সভাপতিসহ বিভিন্ন চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

জানতে চাইলে মাহবুবুল আলম গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সংগঠনের পর্ষদ নির্বাচনে ভোট বড় বিষয় নয়। বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধি থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাঁরা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরতে পারেন। দিন শেষে আমরা সবাই ব্যবসায়ী। নির্বাচনের কারণে বরং ভেদাভেদের সৃষ্টি হয়।’ তিনি আরও বলেন, কাল (আজ) ঐক্য পরিষদের প্যানেল ঘোষণা করা হবে।

অন্যদিকে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আহ্বায়ক মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব নির্বাচনে সাধারণ সদস্যদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। কারণ, ভোটের মাধ্যমেই সঠিক নেতৃত্ব আসবে। সেটি হলেই সরকার ও ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনের রেওয়াজ তৈরি হয়েছে। আমরা এই রেওয়াজের পরিবর্তন চাই।’