পাকিস্তানে অনিশ্চয়তা, ব্যবসায়ী আর ধনীরা চলে যাচ্ছেন দুবাইয়ে

পাকিস্তানছবি : এএফপি

পাকিস্তানের অনিশ্চিত পরিস্থিতি দেশটির ব্যবসায়ীদের দেশের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। গত ২০ মাস যাবৎ পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও ধনীরা দুবাইয়ের আবাসন খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করছেন। এর বাইরে তাঁরা এখন সেখানে আমদানি–রপ্তানির ব্যবসাও খুলে বসেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

করাচিভিত্তিক বিনিয়োগকারী আনওয়ার খাজার ব্যবসা রয়েছে দুবাইয়ে। তিনি ডন পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা আশ্চর্যের বিষয় না যে পাকিস্তানিরা দুবাইয়ের আবাসন খাতে বিনিয়োগ করছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে যা ঘটছে, তা হলো পাকিস্তানিরা এখন সেখানে ব্যবসা–বাণিজ্য শুরু করেছেন।’

আনওয়ার খাজা আরও বলেন, ‘অনেক বড় ব্যবসায়ী পাকিস্তান থেকে তাঁদের ব্যবসা হয় আংশিক বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরোপরি দুবাইয়ে নিয়ে গিয়েছেন। ফলে পাকিস্তান রাজস্ব ও কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ তবে তাঁর মতে, এ কাজ করার ক্ষেত্রে এসব ব্যবসায়ীর যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।

পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এই পরিস্থিতি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আতঙ্কিত করে তুলেছে। করাচির অনেক ব্যবসায়ী কোনো না কোনো গোষ্ঠীকে নিয়মিত চাঁদা দেন।

আনওয়ার খাজা বলেন, অনেক বড় ব্যবসায়ীর পরিবার স্থায়ীভাবে দুবাইয়ে থাকেন। তাঁরা সেখানে বাড়ি কিনেছেন, আর ব্যবসা করেন বিদেশের সঙ্গে। অনেক সময় এই ব্যবসায়ীরা পাকিস্তানি পণ্যের ব্যবসা পরিচালনার জন্য সে দেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেন। অন্য দেশের সঙ্গে তাঁরা সেখান থেকেই আমদানি–রপ্তানির ব্যবসাও করেন।

করাচির এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুবাই থেকে ব্যবসা করা খুবই সহজ, কারণ আমদানি বা রপ্তানি করার জন্য সেখানে হিসাব খুলতে কোনো সমস্যা হয় না। তাঁরা আয় করেন আর দুবাইয়ে বিনিয়োগ করেন। বিশেষ করে, টাকা বানানোর জন্য দুবাইয়ের আবাসন খাত সত্যিই স্বর্গ।’

২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্যাক্স অবজারভেটরি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাকিস্তানিরা দুবাইয়ের আবাসন খাতে ১ হাজার ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন। ফলে উপসাগরীয় ওই শহরে পাকিস্তানিরা তৃতীয় বহত্তম বিনিয়োগকারী হিসেবে উঠে আসে। আবাসন খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ছিল ভারতীয়দের, ২ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার।

ওই প্রতিবেদন আরও বলা হয়েছে, দুবাইয়ে যেসব পাকিস্তানি বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। সবচেয়ে বেশি ছিল ভারতীয়রা। প্রায় ৩৫ হাজার। এরপরের অবস্থান ব্রিটিশদের। তাঁদের সংখ্যা ছিল ২৩ হাজার।

দুবাইয়ের আবাসনে এখন পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। ফলে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এটিই এখন সবচেয়ে বড় বাজার। শেল কোম্পানিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশিরা লন্ডনের জমিজমার বাজারে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে, দুবাইয়ে করা হয় তার দ্বিগুণের বেশি।

খুব দ্রুত ইসলামাবাদে নতুন সরকার করার জন্য অনেক বিশ্লেষক পরমার্শ দিচ্ছেন। কারণ, অনিশ্চয়তা দূর করার এটিই একমাত্র পথ। আবার অনেকে বলছেন, অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক উন্নত করতে নতুন সরকারকে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করতে হবে।

ট্রেসমার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল মামসা বলেন, ‘আগামী সরকারের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হবে মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। কিন্তু সত্যিকার কাজ হবে, এমন একটির ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে নিম্ন প্রবৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও রাজস্ব আয়ের সমস্যার সমাধান করা যায়; রপ্তানি, অর্থনৈতিক উদ্যোগ ও অবকাঠামো বৃদ্ধি পায়; শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও বৈষম্য নিরসনে নজর দেওয়া হয়।’