২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রপ্তানি 

অক্টোবরে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১৩ শতাংশ কম।

দেশে ডলার–সংকট যেন আর কাটছেই না। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় দুই উৎসের একটি প্রবাসী আয় আসা টানা তিন মাস কমার পর সদ্য সমাপ্ত অক্টোবরে ২৯ শতাংশ বেড়েছে। অপর উৎস পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় থাকলেও অক্টোবরে কমেছে। এতে সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির গতি হোঁচট খেয়েছে।

অক্টোবর মাসে ৩৭৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা ২৬ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। আগের মাস সেপ্টেম্বরেই পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। তার আগের দুই মাস জুলাই ও আগস্টে রপ্তানি বেড়েছিল যথাক্রমে ১৫ ও ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে মোট ১ হাজার ৭৪৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বড় খাতগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় আছে। অন্যদিকে হিমায়িত খাদ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমেছে।

গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলার-সংকটে ভুগছে দেশ। রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি ডলার আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে প্রবাসী আয়। প্রকট ডলার-সংকটের সময় এই দুই খাতের উত্থান-পতন অর্থনীতির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

শেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তাদের নিজস্ব হিসাবপদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৬৪৩ কোটি ডলার। আর আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভ আছে ২ হাজার ৬৭ কোটি ডলার।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–অক্টোবর মাসে মোট পণ্য রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ রপ্তানি হয়েছে তৈরি পোশাক। এ সময় ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। আবার পোশাক খাতে ৮৬৮ কোটি ডলারের নিট পোশাক এবং ৬১১ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ২ শতাংশ।

বিজিএমইএ জানিয়েছে, শুধু অক্টোবরের হিসাব করলে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ কমেছে। এ মাসে ৩১৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৩৬৮ কোটি ডলার।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, জানুয়ারি থেকে রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হবে। তবে সেটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ক্রয়াদেশ আসার গতি বাড়লেও তা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা মনে করি, রপ্তানির পরিমাণ যা দেখানো হয়েছে, বাস্তবে তার চেয়ে কম হয়েছে।’

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তৈরি পোশাকের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছিল চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। অক্টোবরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে ৩৩ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।

তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৩৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কম।

এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য, ২৪ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল, সাড়ে ১৫ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন জুতা এবং ১৪ কোটি ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ১১ দশমিক ২৬, হোম টেক্সটাইলে ৪৫ শতাংশ, চামড়াবিহীন জুতায় ২৪ শতাংশ এবং হিমায়িত খাদ্যে ২০ শতাংশ কমেছে রপ্তানি।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, কয়েক মাস ধরে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। ফলে রপ্তানি যে কমবে, এ রকম কোনো আভাস ছিল না। তাই অনেকটা বিস্ময়করভাবে খবরটি এসেছে। আর রপ্তানি কমার কারণে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কোন খাতে ও কোন কোন স্থানে রপ্তানি কমেছে, তা খুঁজে দেখা উচিত।