৮০০ কোটি ডলারের ব্যাংক ১০০ কোটিতে কেনার প্রস্তাব

ক্রেডিট সুইস
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সুইজারল্যান্ডের তারল্যসংকটে পড়া ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে ‘মাত্র’ ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে কিনে নিতে চায় দেশটির বৃহত্তম ব্যাংক ইউবিএস। এ প্রস্তাবে ক্রেডিট সুইস এখনো সায় দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, তাদের ৭৪০ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ৮০০ কোটি ডলারের বাজারমূল্যের তুলনায় ইউবিএস ব্যাংকের এ অফার খুবই নগণ্য। ইউবিএসের প্রস্তাবে রাজি হলে নিজেদের শেয়ারহোল্ডার ও কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

গত সপ্তাহে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসকে তারল্য বাড়াতে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়। এরপরই জানা যায়, ক্রেডিট সুইসকে ইউবিএস এজির সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় ইউবিএস ব্যাংক রোববার ক্রেডিট সুইসকে কেনার প্রস্তাব দেয়। এতে ক্রেডিট সুইসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ধরা হয়েছে শূন্য দশমিক ২৫ সুইস ফ্রাঁ।

সুইস কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএস ব্যাংকের মধ্যে একীভূত হওয়ার চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতা করতে চায়, যাতে ক্রেডিট সুইস সম্ভাব্য বিপর্যয় মোকাবিলা করতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বড় ব্যাংক বন্ধ হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের তারল্যসংকটে পড়ার খবর প্রকাশ পায়। সব মিলিয়ে গত সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী আর্থিক খাত আতঙ্কে কাটায়। বিশেষ করে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধ হওয়া দুই ব্যাংক ও ক্রেডিট সুইসের শেয়ার ছেড়ে দিতে থাকেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরে ব্যাপক পতন ঘটে। এ রকম পরিস্থিতিতে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্যের জোগান দিয়ে ক্রেডিট সুইসকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পাওয়ার খবরে ক্রেডিট সুইসের শেয়ারদর বাড়লেও শুক্রবার আবার তাদের শেয়ারদর ৮ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৮৬ ফ্রাঁতে নেমে গেছে।

তবে ব্যাংকটির গ্রাহক ও ব্যবসায়িক অংশীদারের সরে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। যেমন—১৩ থেকে ১৫ মার্চ ব্যাংকটি থেকে ৪৫ কোটি ডলার আমানত তুলে নিয়েছেন আমানতকারীরা।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রেডিট সুইস ও ইউবিএসকে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দিলেও তারা এ ব্যাপারে নিমরাজি। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে এমন ক্ষমতা নেই, যাতে তারা ব্যাংক দুটিকে একীভূত হতে বাধ্য করতে পারে। ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্ষদ এ সপ্তাহে পৃথক বৈঠক করবে বলেও জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে তিন দিনের ব্যবধানে দুটি ব্যাংক বন্ধ হওয়ার পর পশ্চিমা বিশ্বের ব্যাংক খাতে অস্থিরতা বাড়ছে। তারই প্রমাণ মেলে ক্রেডিট সুইসের তারল্যসংকটে পড়ার ঘটনা। আর্থিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পদ্ধতিগতভাবে ব্যাংক খাতের অবস্থা কী হবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডে আলোচনা চলছে।

এদিকে ক্রেডিট সুইসকে টিকে থাকতে হলে দ্রুতই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে ব্যাংকটি ভেঙেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রেডিট সুইসের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা দীক্ষিত যোশীর চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যাংকের কৌশলগত অবস্থান ঠিক করার কথা রয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি