কানাডায় সরকারি ডিজিটাল যন্ত্রে টিকটক নিষিদ্ধ
আজ থেকে কানাডার সব সরকারি ডিজিটাল যন্ত্রে নিষিদ্ধ হচ্ছে চীনা ভিডিও অ্যাপ টিকটক। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এর মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের বাণিজ্য ও প্রযুক্তি লড়াই নতুন উচ্চতায় উঠবে।
কানাডার একজন সরকারি মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, কানাডা সরকার টিকটককে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে টিকটকের মুখপাত্র কানাডার এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এক দিন আগেই ইউরোপীয় কমিশন একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ১৫ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এরপর কানাডা সরকারও সেই পথে হাঁটল।
সোমবার টরন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, অ্যাপটির নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ আছে, তাই সরকারি গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখতে সরকারি ডিভাইস থেকে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জাস্টিন ট্রুডো আরও বলেন, ‘এটি হয়তো আমাদের প্রথম পদক্ষেপ এবং এর বেশি আমাদের কিছু না–ও করতে হতে পারে।’
ছোট ছোট ভিডিও প্রচারের অ্যাপ টিকটকের মালিক চীনের বাইটড্যান্স লিমিটেড।
এদিকে গত বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মকর্তাদের টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউস সরকারি সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্ক থেকে টিকটক মুছে ফেলার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়েছে।
এর আগে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের জন্য সমালোচিত হয়েছিল টিকটক। চীনা সরকার এই অ্যাপটির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বলে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমা দেশগুলো। বেশ কয়েকটি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নেটওয়ার্ক থেকে টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। ভারত ও এশিয়ার কিছু দেশেও টিকটক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আছে।
টিকটক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের সম্মতি নেয় কি না, সে বিষয়ে কানাডার গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিশেষ করে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহারে যথাযথ অনুমতি নেওয়া হয় কি না, তা খতিয়ে দেখছে তারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টরন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সোশ্যাল মিডিয়া ল্যাবের গবেষকেরা এক জরিপে দেখেছেন, কানাডায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই টিকটক ব্যবহার করেন।
এদিকে কানাডার ট্রেজারি বোর্ডের সভাপতি মোনা ফার্টিয়ার বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার রাষ্ট্রীয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অ্যাপটি এ সপ্তাহ থেকে সরকারি ডিভাইস থেকে মুছে ফেলা হবে এবং পরবর্তীকালে যেন আর ডাউনলোড করা না যায়, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোনা ফার্টিয়ার আরও বলেন, টিকটক ব্যবহার করার জন্য ফোনের অ্যাকসেস দিতে হয়। ফলে ব্যবহারকারীর মুঠোফোনে থাকা সব তথ্য তারা জেনে যায়। সে জন্য অ্যাপটি নিরাপদ নয়।
বিবিসিকে দেওয়া বিবৃতিতে টিকটকের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘প্রমাণ ছাড়াই কানাডা সরকার টিকটককে দোষারোপ করছে। তারা সরকারি ডিভাইসে টিকটক নিষিদ্ধ করেছে। অথচ এ নিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি।’
টিকটকের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘আমরা কীভাবে কানাডীয় নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করি, সে বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। কিন্তু এভাবে টিকটক বন্ধ করে দেওয়া যেকোনো বিচারে নিন্দনীয়।’
বাণিজ্য ও প্রযুক্তিযুদ্ধ
চীন অন্যায় সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল রপ্তানি করছে—এই অভিযোগ তুলে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের পণ্যে বিপুল হারে শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করে।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, চীন প্রযুক্তিপণ্যের মাধ্যমে সে দেশে নজরদারি করে। এ অভিযোগে ফাইভ–জি প্রযুক্তির অবকাঠামো নির্মাণে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়েকে কাজ করতে দেয়নি পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি হুয়াওয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে কানাডা পুলিশ। সেই ধারাবাহিকতায় কানাডা এবার সরকারি ডিজিটাল যন্ত্রে টিকটক ব্যবহার নিষিদ্ধ করল। এতে দুই দেশের মধ্যকার লড়াইয়ের পালে আবার হাওয়া লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।