মুরগির দেখাদেখি মাছও ওপরে উঠে গেছে

হঠাৎ ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকে সস্তা দামের মাছের প্রতি ঝুঁকেছিলেন। তবে বাজারে ২০০ টাকা কেজির নিচে কোনো মাছ নেই বললেই চলেফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাজারে এখনো মুরগির দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসেনি। দাম একটু কমলেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা থেকে ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে জন্য ক্রেতারা মুরগি কিনছেন কম। এতে চাপ বেড়েছে মাছের বাজারে। এই সুযোগে চড়ে গেছে সব ধরনের মাছের দাম। বাজারে ২০০ টাকা কেজির নিচে কোনো মাছ নেই বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের দাবি, হাওর-বাঁওড় শুকনো থাকায় মাছের সরবরাহ কম। তাই চাষের মাছের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালী, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কম দামি মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাশ ও তেলাপিয়াও এখন ২০০ টাকার নিচে নেই। আকারভেদে এই দুই পদের মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নলা মাছের কেজিও ২০০ থেকে ২২০ টাকা। ২০০ টাকার নিচে মিলছে শুধু চাপিলা মাছ। বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে।

মগবাজারের মাছ বিক্রেতা হাসান মিয়ার কাছে দেশি সরপুঁটি মাছের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতি কেজির দাম ২৫০ টাকা। হাসান মিয়ার দাবি, দেশি সরপুঁটি মাছ খেতে হলে দাম দিয়ে খেতে হবে। কারণ, বাজারে এখন সব মাছের দাম বেশি। মুরগির উচ্চ দাম মাছের বাজারে প্রভাব ফেলেছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসান মিয়া বলেন, মানুষ হয় মাছ, না হয় মাংস কেনেন। এখন যেহেতু মাংসের দাম বেশি। তাই মাছের দামেও মাংসের দামের প্রভাব আছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কার্পজাতীয় মাছের দামেও ঊর্ধ্বগতি। ক্রেতাদের দেড় থেকে ২ কেজির বেশি ওজনের রুই মাছ কিনতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এক কেজির নিচের রুই মাছের কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার আশপাশে। কাতলা মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। কালবাউশ মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। রোজার আগের চেয়ে এখন রুই, কাতলা ও কালবাউশ—এই ৩ পদের মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বাড়তি বলে জানালেন বিক্রেতারা। আকারভেদে পাবদা মাছের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা।

এদিকে বোয়াল, ট্যাংরা, ইলিশ, কোরাল, শোল, আইড়, চিংড়ি ও পাবদার মতো মাছের দাম যেন সাধারণ মানুষের একেবারে নাগালের বাইরে। ২ কেজির ওপরের বোয়ালের কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। আকারভেদে ট্যাংরা মাছের কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা। ইলিশের দাম সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা কেজি। এই দামে এক কেজিতে দুটি ইলিশ পাওয়া যায়।

কোরালের কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। একটু বড় আকারের শোল মাছের দাম ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। আইড় মাছের দাম হাঁকানো হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। চিংড়ি মাছের মধ্যে বাগদার দাম আকারভেদে ৬০০ থেকে শুরু করে ৭৫০ টাকার মধ্যে। গলদা চিংড়ির কেজি আকারভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষ তো দামি মাছ তেমন খেতে পান না। রমজানে তাঁরা রুইজাতীয় মাছ একটু বেশি কিনতে চান। ফলে মাছের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে রোজার আরও কয়েকটা দিন গেলে দাম কিছুটা কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

মহাখালী বাজারের ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাছ-মাংস খাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। মাসের শেষে এসে সস্তার মাছ খুঁজছিলাম। কিন্তু সস্তার মাছও এখন বেশ দামি।’

এদিকে বাজারে আজ ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকালের তুলনায় মুরগির মাংসের দাম কোথাও কোথাও অবশ্য কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজি রাখা হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের দাম পড়ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ডজন।