ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেশে কমছে পেঁয়াজের দাম

পেঁয়াজফাইল ছবি: প্রথম আলো

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, এমন খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ভারত থেকে গত দুই দিনে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে খুবই সামান্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ বেশি পড়ছে। কারণ, রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে দেশটির সরকার। একই সঙ্গে ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপের কারণে আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।

আজ সোমবার রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও মালিবাগ বাজার ঘুরে জানা যায়, সাধারণ দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মতো বড় বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজের দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। তাতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা।

এদিকে দেশে পেঁয়াজের অন্যতম উৎপাদন এলাকাখ্যাত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় গত দুই দিনে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে ২০০ টাকার মতো কমেছে। আজ এ উপজেলায় প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। সেই হিসাবে, পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৫২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত।

সাঁথিয়ার বোয়ালমারী হাটের পেঁয়াজের আড়তদার রাজা হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, দাম কমে যাওয়ায় হাটে পেঁয়াজও কম আসছে। গতকাল হাটবার সত্ত্বেও বোয়ালমারী হাটে মাত্র চার থেকে পাঁচ গাড়ি (প্রতি গাড়িতে ১৪ থেকে ১৫ টন) পেঁয়াজ এসেছে। অথচ অন্য সময় ২০ থেকে ২৫ গাড়ি পেঁয়াজ বিক্রি হয় এ হাটে। ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের দাম ও কদর সব সময়ই বেশি থাকে বলে জানান তিনি।

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকার প্রতি টন পেঁয়াজর ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫৫০ মার্কিন ডলার। ডলারের বিনিময় মূল্য ১১০-১১৮ টাকা হিসাবে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি মূল্য পড়বে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এই দামের সঙ্গে যোগ হবে রপ্তানি শুল্ক, পরিবহন ও শ্রমিকের খরচ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না আমদানিকারকেরা। তবে আমদানিকারকেরা বলছেন, ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক তুলে নেওয়ার চিন্তা করছে বলে রপ্তানিকারকেরা তাঁদের জানিয়েছেন।

দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ সরকার অবশ্য পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে রেখেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গ নিরোধ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ২৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে দেশে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৭ লাখ ১৮ হাজার টন। গত দুই দিনে দেশের একটি স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে মাত্র ৮২ টন পেঁয়াজ। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ আসেনি।

রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক নারায়ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার খবরে বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের কথাবার্তাও চলছে। শুল্ক তুলে নিলে হয়তো ব্যবসায়ীরা পুরোদমে আমদানি শুরু করবেন।

দেশে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। এতে চাহিদা মিটে যাওয়ার কথা। তবে সংরক্ষণের অভাবে কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়। তাই পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।