আর্থিক সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে

বাংলাদেশে শাখাভিত্তিক ব্যাংকিং মডেলের বিকল্প হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ব্যবসার পরিমাণ কম হওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন অর্থনৈতিকভাবে সম্ভব নয়। কারণ, এতে যে খরচ হয়, ব্যবসা করে তা আয় হয় না। মৌলিক ব্যাংকিং সেবা যেমন নগদ জমা, নগদ উত্তোলন, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয় বিতরণেই বেশি ব্যবহৃত হয় এজেন্ট ব্যাংকিং।

বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি। সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে, তাদের জন্য ব্যাংকিং সেবার নিরাপদ বিকল্প চ্যানেল তৈরির ক্ষেত্রে এ সেবা ব্যবহৃত হচ্ছে। এ সেবার প্রসারে বড় ভূমিকা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা সফলতার প্রমাণ রেখেছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আর্থিক সেবা পেয়েছে। তখন অনেক ব্যাংক শাখা বন্ধ থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বুথ খোলা ছিল। এজেন্ট বুথগুলোতে সব সময় ব্যাংকের মূল সুবিধা পাওয়া গেছে। করোনার লকডাউনের কারণে ব্যাংকগুলোর পরিচালন সময় সীমাবদ্ধ ছিল, তখন এজেন্টরাই ব্যাংকিং কার্যক্রম টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিস্তৃত গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাংকিং সেবার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এজেন্ট পয়েন্টগুলো বড় শূন্যতা পূরণ করেছে। এজেন্ট ব্যাংকিং মডেল নারীদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার এজেন্টরা নিজ এলাকার, সে জন্য এই সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের সামাজিক বাধাও নেই। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার প্রায় অর্ধেক গ্রাহকই এখন নারী।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা এগিয়ে নিতে আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম এজেন্টদের আরও প্রশিক্ষণ দেওয়া। এর মাধ্যমে তারা শুধু এজেন্ট নয়, ব্যাংকার হিসেবেও স্বীকৃতি পাবে, আরও দায়িত্ব পালন করতে পারবে। এ ছাড়া আমাদের এজেন্ট বুথগুলোর সেবায় পরিবর্তন আনতে হবে, যেন এসব সেবা গ্রাহকদের জন্য যথাযথ হয়। এতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনা সম্ভব হবে। আমাদের আরও যা প্রয়োজন তা হলো, অর্থনৈতিক সেবার মধ্যে প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা, এতে দ্রুত ও নিরাপদভাবে লেনদেন করা যাবে। এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং আরও জনপ্রিয়তা পাবে ও তার প্রবৃদ্ধি হবে।