রডের দাম প্রথমবার লাখ টাকা ছাড়াল

গতকাল নতুন করে রডের বাজারে শীর্ষস্থানীয় তিনটি কোম্পানি প্রতি টন রডের দাম ৫০০ টাকা করে বাড়িয়েছে। তাতে খুচরা পর্যায়ে নির্মাণ উপকরণটির দাম প্রথমবারের মতো লাখ টাকায় পৌঁছায়।

চট্টগ্রামের একটি ইস্পাত কারখানায় সারি সারি রড মজুত করে রাখা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

নির্মাণ মৌসুমের শেষ দিকে এসে রডের দাম আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। গতকাল বুধবার রডের বাজারের শীর্ষ সারির কোম্পানিগুলো প্রতি টন রডের দাম ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে। তাতে তিনটি কোম্পানির রডের দাম প্রতি টন এক লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে কখনোই লাখ টাকায় রড বিক্রি হয়নি বলে উৎপাদকেরা জানিয়েছেন।  

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় রডের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে উৎপাদকেরা জানিয়েছেন। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস–বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি মূল্য পরিশোধ, তুরস্কের ভূমিকম্পের পর বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির কারণে রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাতে গ্যাস–বিদ্যুৎ ও ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তার কাঁধে এসে পড়েছে।    

জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, রড উৎপাদনে খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তা সমন্বয় করা হয়েছে। শুধু জাহাজভাঙা শিল্পের স্ক্র্যাপ (পুরোনো লোহার টুকরো) ব্যবহার করে রড উৎপাদন করলে এখন খরচ পড়বে ন্যূনতম ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।

তিন ব্র্যান্ডের রড এখন লাখ টাকা

লাখ টাকা ছাড়ানো শীর্ষ সারির প্রথম তিনটি ব্র্যান্ড হলো বিএসআরএম, আবুল খায়ের স্টিল ও জিপিএইচ ইস্পাত। এর মধ্যে সর্বোচ্চ দাম জিপিএইচ ইস্পাতের রডের। খুচরায় তাদের রডের টনপ্রতি সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫০০ টাকা। বিএসআরএম ও আবুল খায়ের স্টিলের রডের দাম ১ লাখ টাকায় থেমেছে। এ ছাড়া বুধবার দাম বাড়ানোর পর কেএসআরএম ব্র্যান্ডের রড ৯৮ হাজার টাকা এবং এইচএম স্টিল ব্র্যান্ডের রড ৯৬ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

রড উৎপাদনে খরচ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় তা সমন্বয় করা হয়েছে। শুধু জাহাজভাঙা শিল্পের স্ক্র্যাপ ব্যবহার করে রড উৎপাদন করলে এখন খরচ পড়বে ন্যূনতম ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
তপন সেনগুপ্ত, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএসআরএম গ্রুপ

দাম বাড়ার এ প্রবণতা শুরু হয়েছে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। কোম্পানিগুলোর নীতি হলো, তারা এক লাফে রডের দাম খুব বেশি বাড়ায় না। সাধারণত একবারে টনপ্রতি রডের দাম ৫০০ টাকা বাড়ায় তারা। যেমন এ সপ্তাহে সোমবার টনপ্রতি ৫০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এরপর গতকাল বুধবারও বাড়ানো হয়েছে ৫০০ টাকা।

জানতে চাইলে খুচরা রড বিক্রির প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হালিশহরে আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার মুহিদুল মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক–দুবার ৫০০ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। এভাবে গত প্রায় দুই মাসে রডের দাম টনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তবে তিন ব্র্যান্ডের রডের দাম বুধবারই লাখ টাকায় উঠেছে। অন্য ব্র্যান্ডের রডের দামও টনপ্রতি লাখ টাকা ছাড়ায়নি।  

দাম কেন বাড়ছে

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের চার–পাঁচ মাসের মাথায় বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। তবে ব্যতিক্রম রডের কাঁচামাল–পুরোনো লোহার টুকরা বা পুরোনো জাহাজের দাম। যুদ্ধের পর থেকে গত নভেম্বরে এই কাঁচামালের দাম যুদ্ধের আগের দামে ফিরে আসে। নভেম্বরে বিশ্ববাজারে টনপ্রতি কাঁচামালের দাম ৪৪০–৪৬০ ডলারে নেমেছিল। তবে এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি এ দাম। ধীরে ধীরে দাম বেড়ে এখন আবার ৫০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

রডের কাঁচামালের আরেক উৎস পুরোনো জাহাজের দামও আবার বাড়তে শুরু করেছে। গ্রিসভিত্তিক ইন্টারমোডাল শিপব্রোকার্সের গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জাহাজভাঙা শিল্পমালিকেরা তিনটি জাহাজ কিনেছেন। এই তিনটি জাহাজের টনপ্রতি লোহার দর পড়েছে ৫৬০ ডলার, ৫৮৫ ডলার ও ৬১৬ ডলার। গত ডিসেম্বরে পুরোনো জাহাজের টনপ্রতি দাম ৫০৫ ডলারে নেমেছিল।  

জানতে চাইলে এইচএম স্টিলের পরিচালক মোহাম্মদ সরওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর–ডিসেম্বরে কাঁচামালের দাম কিছুটা কম ছিল। সেখান থেকে এখন টনপ্রতি ৭০–৮০ ডলার বেড়ে গেছে। মাসখানেক আগে কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও এখন আবার আমদানি মূল্য পরিশোধের জন্য ডলার কিনতে হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১২ টাকায়। গ্যাস–বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং কাঁচামালের অভাবে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন চালানো যাচ্ছে না। তাতে খরচ বাড়ার বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এ জন্য প্রস্তুত পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই উৎপাদকদের কাছে।